Benjamin RIT - Invidious

প্রেম ও প্রাসাদ
লিখিকা :জান্নাতুল মাওয়া
১০ম পর্ব

এডওয়ার্ডের কথা শুনে ক্লাইব থমকে বসে রইল কিছুক্ষণ। ক্লাইবের মনে হচ্ছে, একটু আগে তার মাথায় যেন এক আকাশ ভেঙে পড়েছে। এডওয়ার্ড ক্লাইবকে এভাবে থমকে বসে থাকতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল, ক্লাইবের মুখের সামনে হাত নিয়ে তুড়ি বাজাল। এডওয়ার্ডের তুড়িতে ক্লাইবের হুঁশ ফিরল। হুঁশ ফিরতেই ক্লাইব কিছুটা নড়ে চড়ে বসে বলে উঠল—

—"সুলতান? এটা মজা করার সময় নয়। আমরা এখন একটা অঞ্চল দখল করতে এসেছি, আর আপনি কিনা এই সময়ও মজায় মগ্ন?"

"দেখুন—" ক্লাইবের কথা থেমে গেল এক মুহূর্তের জন্য। এতক্ষণ সে পুরো কথাগুলো অন্যদিকে তাকিয়ে বলছিল, কিন্তু শেষের কথাটা এডওয়ার্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে যাচ্ছিল সে। কিন্তু এডওয়ার্ডের দিকে তাকাতেই সবসময়কার মতো আবারও কথা গুলিয়ে ফেলল সে। “দেখুন…” —এর পরে কী বলবে, সেটা ভুলে গেল শুধু এডওয়ার্ডের মুখের দিকে তাকিয়েই।

এতক্ষণ ধরে এডওয়ার্ড ক্লাইবের দিকে তাকিয়ে ক্লাইবের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, মাথা নেড়ে বুঝাচ্ছিল যে সে সহমত। এতক্ষণ ক্লাইব সেটা খেয়াল করেনি, কিন্তু এবার খেয়াল করতেই নিজেকে হারিয়ে ফেলল সে। তার ওপর ক্লাইব যখন এডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে ছিল, তখন এডওয়ার্ড ক্লাইবের দিকে তাকিয়ে বাঁদিকে ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসেছিল, যার ফলে তার বাঁ দিকে থাকা গেঁজ দাঁতটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ক্লাইবের কাছে।

ক্লাইবের কাছে এডওয়ার্ডের হাসিটা খুব ভয়ংকর মনে হল, তাই সে তাড়াতাড়ি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। তার পক্ষে এডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। ক্লাইবের এমন অবস্থা দেখে এডওয়ার্ড সশব্দে হেসে উঠল এবার, কিছুক্ষণ কপালে হাত দিয়ে হাসল, তারপর ক্লাইবের উদ্দেশে বলে উঠল—

—"ক্লাইব, একটা কথার উত্তর দাও আমায়?"

ক্লাইব এতক্ষণ ধরে থমকে ছিল। মূলত এডওয়ার্ডের সশব্দ হাসি শুনে সে আবার ভড়কেছিল। কিন্তু এবার এডওয়ার্ডের কথা শুনে, এডওয়ার্ডের দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল—

—"জি বলুন, সুলতান।"

এডওয়ার্ড গলা খানিক নিচু করে বলে উঠল—

—"তুমি কি পুরুষ?"

এডওয়ার্ডের এমন কথায় ক্লাইব বিশালভাবে চমকে উঠল। সে তড়িঘড়ি করে বসা থেকে উঠে বলে উঠল—

—"কি বলছেন এসব সুলতান! আমি পুরুষ নই তো কী? আর আপনি আমার পুরুষত্বের ওপর আঙুল তুলতে পারলেন এইভাবে? 🥺 আমি কিন্তু একজন পুরুষ! আর আপনার সন্দেহ হলে আপনি দেখতে পারেন, আমার কোনও অসুবিধা নেই।"

ক্লাইবের কথায় এডওয়ার্ড আবারও উচ্চস্বরে হেসে উঠল। হেসে হেসেই বলে উঠল—

—"দেখব বলছ? তাহলে একটু দেখি?"

এটা বলে এডওয়ার্ড ক্লাইবের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। ক্লাইব এটা দেখে ডোগ গিলে পিছিয়ে যেতে লাগল। একপর্যায়ে পিছোতে পিছোতে একটা গাছের সঙ্গে পিঠ ঠেকল ক্লাইবের। এডওয়ার্ড নিজের বাঁ হাতটা গাছটার উপর রাখতেই ক্লাইব কান্না কান্না গলায় বলে উঠল—

—"এডওয়ার্ড, আপনার সন্তানের মায়ের দোহাই লাগে, এমনটা করবেন না। এই সম্পদটা একান্ত আমার অর্ধাঙ্গিনীর। আমি তার অধিকার হরণ হতে দিতে পারি না।

হুরের কসম
শুনে এডওয়ার্ড সরে এল। মূলত সে এমন কোনো কাজ করত না, সে শুধু ক্লাইবকে ভয় দেখানোর জন্যই এমন করেছিল। এডওয়ার্ড সরে আসতেই ক্লাইবও এডওয়ার্ডের থেকে দূরে সরে এল। এডওয়ার্ড ক্লাইবকে দূরে সরে যেতে দেখে বলে উঠল—

—"থামো থামো, আমি এমন কিছুই করব না। তোমার ম্যাডামের অধিকার, তোমার ম্যাডামেরই থাকবে। এখন আমার কথা শুনো।"

এই বলে এডওয়ার্ড আবার বটগাছের সামনে গিয়ে আগের মতো বসে পড়ল। ক্লাইব এবার একটু গুরুত্ব দিয়ে এডওয়ার্ডের কথা শুনল। সে খুব গম্ভীর মুখে এডওয়ার্ডের পাশে এসে বসে পড়ল। তারপর জিজ্ঞেস করল—

—"আমায় সব খুলে বলুন, সুলতান।"

এডওয়ার্ড ধীরে ধীরে ক্লাইবকে সব বলল—তার সাথে এই একদিনে কী কী ঘটেছে, হুরের কথাও বলল। এডওয়ার্ডের সব কথা ক্লাইব মানতে পারলেও, হুরের বিষয়টা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লো। তার একটাই কথা—এডওয়ার্ড একজন ইংরেজ আর হুর একজন বাঙালি। তার ওপর হুর মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া মেয়ে, আর এদিকে এডওয়ার্ড একজন খ্রিস্টান।

আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো—এলেনর গ্রিচ আর ইসাবেলা রোজ। এলেনরকে সুলতান এডওয়ার্ড কোনোভাবে বুঝাতে পারবে সেটা ক্লাইব জানে, কিন্তু ইসাবেলা -- সে কোনোদিনও মানবে না। ওই মেয়ে যে পাগলের মতো ভালোবাসে এডওয়ার্ডকে, সেটা কি এডওয়ার্ড বুঝে না?

এসব ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলল ক্লাইব। ক্লাইবের কাছে এডওয়ার্ডের কথাগুলো খুবই বোকা বোকা মনে হল। কিন্তু পরে মনে পড়ল—এডওয়ার্ড বোকা নয়, সে ঠান্ডা মাথার কূটনৈতিক বুদ্ধি নিয়ে চলে। ক্লাইব বিশ্বাস করে—এডওয়ার্ডের বুদ্ধির কাছে রবার্ট ক্লাইবও হার মানবে। এডওয়ার্ড নিজের কূটনৈতিক বুদ্ধির মাধ্যমে আজ পর্যন্ত অনেক অঞ্চল দখল করেছে।

কিন্তু এবার কাহিনি অন্যদিকে যাচ্ছে।

এবার এডওয়ার্ড ইলতিয়াজ সুলতান এক কিশোরী কন্যার কাছে বন্দি হয়ে গেছে।

হঠাৎ ক্লাইব খুব ভয় পেল—এই কিশোরী কন্যা কি এডওয়ার্ডের পতনের মূল? নাকি সে একটু বেশি ভাবছে?

নারী জাতি খুবই ভয়ংকর। নারী চাইলে সব পারে। নারীজগৎ রহস্যে ঘেরা। তাদের হৃদয় যেমন কোমল, ঠিক তেমনই কঠিন। একজন নারী তার সামান্য কোমলতায় গড়ে দিতে পারে একটি গোটা পৃথিবী, আবার সেই নারী সামান্য রাগেই ধ্বংসের স্তূপে পরিণত করতে পারে পৃথিবীকে।

হাজার হাজার পুরুষের পতনের পেছনে থাকে এক কোমলমতি নারী। আবার হাজার হাজার পুরুষের সুখের পেছনেও থাকে একজন নারী।

কেউ অপূর্ণতার শোকে মাঝসমুদ্রে সাঁতার কাটে, আবার কেউ পূর্ণতা পেয়ে নিজের স্বপ্নের নারীর সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়।

ক্লাইবের চিন্তা ভাবনার মধ্যে এডওয়ার্ড বলে উঠল—

—"ওকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও থাকা যাচ্ছে না ক্লাইব। ওই কিশোরী মেয়ে আমায় পাগল করে দিয়েছে। সারা দেহে শুধু তার বসবাস। কিছুতেই ভুলে যাওয়া যাচ্ছে না তাকে। চোখ বন্ধ করলেই তার মায়াবী মুখটা ভেসে ওঠে। এই একদিনেই আমি তার কাছে কুপোকাত হয়ে গেছি। তাকে যে কোনো মূল্যে চাই, আর সেটা আজ-কালকের মধ্যেই।"

এডওয়ার্ডের কথা শুনে ক্লাইব বলে উঠল—

—"একটু ধৈর্য ধরুন সুলতান। আপনি তো এতটা অধৈর্য ছিলেন না। তাহলে আজ এমন কেন করছেন?"

ক্লাইবের কথা শুনে এডওয়ার্ড তাচ্ছিল্যভরে হেসে বলে উঠল—

—"ধৈর্য! হুঁ! এই একদিনে আমার কতকেজি ধৈর্য বেড়েছে সেটা তুমি জানো ক্লাইব? এই একদিন—আমি আর হুর এক কুটিরে ছিলাম। হুর আমার আশেপাশে আছে এটা জানার পরও নিজেকে সামলে রেখেছি আমি। এটা কি কম ধৈর্যের বিষয়? বরং আমার তো মনে হচ্ছে এই একদিনে আমার ধৈর্যের পাল্লা দ্বিগুণ বেড়েছে!"

এটা বলে কিছুক্ষণ নীরব হয়ে রইল এডওয়ার্ড। ক্লাইব এডওয়ার্ডের নীরবতা দেখে সেও চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ নীরব থেকে এডওয়ার্ড আবার বলে উঠল—

—"যেভাবেই হোক, হুরকে আমার চাইই চাই।"

এডওয়ার্ডের কথা শুনে ক্লাইব বলে উঠল—

—"কিন্তু যদি মোল্লা সাহেব হুরকে দিতে অনিহা করেন, তাহলে?"

ক্লাইবের কথায় এডওয়ার্ড সামান্য বাঁকা হেসে বলে উঠল—

—"না দিলে—যেটা করার, সেটাই করব!"

___________

চারদিকে আসরের আযানের ধ্বনি ভেসে উঠেছে। আস্তে আস্তে ঘুমন্ত নোরো-নারী জেগে উঠছে। চারপাশে আবার সেই ব্যস্ত রূপ দেখা যাচ্ছে।

আয়েশা খাতুন আযানের ধ্বনি শুনে উঠে পড়লেন। পাশে থাকা হুরকেও তুলে দিলেন। হুর উঠে গিয়ে গোসলঘরের দিকে পা বাড়াল। বসার ঘরে পা রাখতে দেখে—দরজাটা সামান্য ফাঁক রাখা, সে অবাক হল না, কারণ এটা তারই আব্বাজান করে যান।

গোসলঘর থেকে ওজু করে এসে তার আম্মার পাশে এসে নামাজ আদায় করে নিল হুর। হঠাৎ হুরের নামাজের মধ্যেয় মনে পড়ল—এডওয়ার্ড কি নামাজ পড়বে না? না কি এখনো সেই গাধার মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে? হুর ভাবল নামাজ শেষে সে গিয়ে ডেকে দেবে। কিন্তু পরক্ষণেই সকালের কথাগুলো মনে পড়ল তার... এসব ভাবতে ভাবতেই তার মনে পড়লো সে তো নামাজে আছে,,,,,

নামাজ শেষে হুর তসবি জপল কিছুক্ষণ। তারপর প্রতিদিনের মতো ২০ মিনিট মুনাজাতে সময় কাটাল। আল্লাহ ভালো জানেন—এই মেয়ে তার কাছে কী চায়।

আয়েশা খাতুন জায়নামাজে বসে বসে মেয়েকে দেখছেন। তিনি মনে মনে হেসে উঠলেন—"নামাজ পড়ে ৮-১০ মিনিটের, আর মুনাজাত দেয় ২০ মিনিটের…"

এসব ভেবে তিনি মেয়েকে আরও একটু ভালো করে দেখলেন। মেয়ে তাঁর—মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী। যেখানে এই বয়সে একেকটা মেয়ে সংসারে ব্যস্ত, সেখানে তিনি আর তাঁর স্বামী এই মেয়েকে এখনো ঘরে রেখেছেন। এটা নিয়ে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে অনেকের কাছ থেকে। কিন্তু তাঁরা কেউই এসব আমলে নেননি। মেয়েকে ঘরে বসিয়েই পড়াশোনা করাচ্ছেন।

এই সবকিছুর পেছনে হামিদ মোল্লার হাত। তিনিই মেয়েকে আলাদা করে সময় দিয়ে পড়াচ্ছেন। হামিদ মোল্লা একজন শিক্ষিত মানুষ, তাই তাঁর কাছে শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বড়।

মুসলিম পাড়ায় তেমন কোনো পাঠশালা না থাকায় তিনি মেয়েকে পাঠশালায় দেননি। জিয়াগঞ্জে মাত্র একটাই পাঠশালা আছে আর সেখানে শুধু উচ্চবিত্তদের ছেলেরা পড়ার সুযোগ পায়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ ছিল। তাই তিনি মেয়েকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন।

আয়েশা খাতুন কতক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তাঁর মনে হল—হুর যত বড় হচ্ছে, ততই তার সৌন্দর্য বাড়ছে। ছোটবেলায় হুর তেমন সুন্দর ছিল না, কিন্তু দিন যেতে যেতে, বয়স বাড়তে বাড়তে যেন তার সৌন্দর্যও বেড়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ কিছু একটা শব্দ পেয়ে ধ্যানভঙ্গ হল আয়েশা খাতুনের। হুরেরও মুনাজাত শেষ হল তখনই। হুরকে উঠতে দেখে আয়েশা খাতুন বলে উঠলেন—

—"হুর, তোর আব্বা আসছেন মনে হয়। দেখে আয় একটু মা, আর পারলে ভেষজ জল টা একটু পুটিয়ে নিস,আমি আসছি,,,

হুর তার আম্মার কথায় মাথা নেড়ে বসার ঘরে চলে গেল। বসার ঘরে এসে দেখতে পেল—তার আব্বা কুরআন পড়ছেন। এটা দেখে সে সামান্য হাসল। তার আব্বাজানের নিয়মিত কাজ এটি। খাবার বাদ দিতে পারেন, তবে নামাজ আর কুরআন পার্ট —কখনো বাদ দেন না তিনি।

হুর রান্নাঘরে গেল। আপাতত এখন তাকে ভেষজ জল ফুটাতে হবে…

চলবে,,,,,,,,,

নে নে বইন নে এ কয়দিন পাগল বানায়া দিলি আমায় 🌚🌚 বেশি বেশি response না পািলে পরের পার্ট পাবি নাহ আর 🔪🌚..

1 month ago (edited) | [YT] | 36

View 68 replies

Benjamin RIT

প্রেম ও প্রাসাদ
লিখিকা :জান্নাতুল মাওয়া
৯ম অংশ

,,,,,

কৃষকেরা বসতেই অন্দর মহলের বাইরে থেকে এক পুরুষালী উত্তেজিত আওয়াজ এলো —
“সুলতান! আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”
হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর পেয়ে, সবাই অন্দর মহলের দরজার দিকে দৃষ্টি দিল।
কেদারায় বসে থাকা নারীটি বলে উঠলো —
“হুম, আসো”
অনুমতি পেয়ে, অন্দর মহলের বাইরে থাকা যুবকটি ভিতরে ঢুকলো, যুবকটিকে দেখে বসে থাকা কৃষকেরা আবার দাঁড়িয়ে পড়লো, মাথা নিচু করে সম্মান জানালো।
যুবকটিও তাদের সম্মান জানানো গ্রহণ করলো।

“তোমরা এখন চলে যাও, আমি কালকে এই ব্যাপার নিয়ে আবার বসবো, সবাই প্রস্তুত থেকো।”
কেদারায় বসে থাকা নারীর গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলা কথায় কৃষকেরা দ্বিমত জানালো না, সবাই মাথা নিচু করে কেদারায় বসে থাকা নারী এবং যুবকটিকে সম্মান জানিয়ে বাইরে চলে গেল।

কৃষকেরা বাইরে যেতে, যুবকটি বলে উঠলো —
“সুলতান এলেনর, সুলতান এডওয়ার্ড এর —কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সিপাহিরা জিয়াগঞ্জের চারপাশে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু সুলতান এর দেখা নেই।”
যুবকটির কথা শুনে এলেনর গ্রিচের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন —
“এডওয়ার্ডের সাথে তোমার শেষ কথা কী হয়েছিল?”
যুবকটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো —
“উনি তেমন কিছু আমাকে বলেননি, শুধু এইটুকুই বলেছিলেন, উনি নাকি মুসলিম পাড়ার কারো কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেবেন।”
এলেনর গ্রিচ রাগ ঠেলে খুবই শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন —
“তাহলে মুসলিম পাড়ায় কেন সিপাহী পাঠাচ্ছো না তুমি, ক্লাইব?”
“কিন্তু সুলতান, এডওয়ার্ড সুলতানের নির্দেশই ছিল—আমরা যেন ঐ পাড়ায় না যাই, উনি নাকি আমাদের সাথে দেখা করতে আসবেন। কিন্তু যতদূর খোঁজ পাওয়া গেল, উনি এখনো দেখা করতে আসেননি।”
সুলতান এলেনর গ্রিচ এবার খুব চিন্তিত হলেন নিজের ছেলের খবরে। তিনি ক্লাইবকে আদেশ দিয়ে বললেন —
“ক্লাইব, যত দ্রুত সম্ভব সিপাহিদের জিয়াগঞ্জে পাঠাও। এবং তুমিও যাও। আর ঐ মুসলিম পাড়ায় গিয়ে আমার ছেলের খবর নিয়ে আসো। মুর্শিদাবাদে আমি আর এরিস্টেটল আছি। চিন্তা করোনা। আর যত দ্রুত সম্ভব, আজকের মধ্যেই সিপাহিদের পাঠাতে হবে।”
ক্লাইব এলেনর গ্রিচের কথায় সম্মতি জানিয়ে অন্দর মহল থেকে বের হয়ে গেল।
ক্লাইব যেতে এলেনর গ্রিচ বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলেন —
“হে ঈশ্বর, আমার এডওয়ার্ড... আমার এডওয়ার্ডকে রক্ষা করুন।”

_____________

বিকেল
মুসলিম পাড়া আজ খুবই শান্ত। শুধু আজই নয়, প্রত্যেকটা বিকেলেই এইভাবে শান্ত থাকে এই পাড়া।
হুরদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে এক কিশোরী, দেখে মনে হচ্ছে কাউকে খুঁজছে।
মেয়েটির গায়ের রঙ শেম বর্ণের। কিছুক্ষণ মেয়েটি হুরদের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করে, কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ দেখে বাড়ির পেছনে চলে যায়।
বাড়ির পেছনে যেটে না যেতেই থমকে গেল কিশোরী মেয়েটি।
হুরের জানালা দিয়ে এক যুবক বের হচ্ছে...

মূলত মেয়েটি হলো হুরের সখী সোরমিলা।
প্রতিটি বিকেলে সে আর হুর বরুই খুঁজতে যায়।
তবে হুর বিকেলে ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু সোরমিলা হুরের ঘুমের তোয়াক্কা না করে হুরকে তুলে বরুই গাছের নিচে চলে যায়—আজও ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু আজ ঘটলো অন্য কিছু।
আজ হুরকে ডাকতে এসে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সে—
হুরের জানালা দিয়ে এরকম এক সুপুরুষ বের হতে দেখে থমকাল সে।
সে পুরুষের গায়ে এক কালো চাদর জড়ানো থাকলেও, তার মুখ সোরমিলার কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট।

এডওয়ার্ড জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল, যেহেতু জানালায় সাঁট দেওয়া ছিল নাহ তাই এডওয়ার্ডের বের হতে তেমন কষ্টও হয়নি।
সে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে তার গন্তব্যের দিকে ছুটলো—
মূলত এখন তাকে মুসলিম পাড়া থেকে বের হতে হবে... সে উদ্দেশ্যেই চলে গেল সে।

সোরমিলা অবাক দৃষ্টিতে এডওয়ার্ডের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো...
তার ছোট মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এডওয়ার্ড কোনো সুদর্শন চোর হবে,
যে কিনা হুরের কামরায় ঢুকে হুরের সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছে।
সোরমিলা প্রায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এডওয়ার্ডের কথা চিন্তা করলো—
তার বাচ্চা মনে এক সুপুরুষের জায়গা হলো, সে কোনো মতেই এডওয়ার্ডের কথা মাথা থেকে ফেলতে পারলো না।
তখন আর হুরকে ডাকা হলো না সোরমিলার, নিজে বাড়িতে চলে গেল সে।

__________

দুপুরের আহার সেরে মোল্লার বাড়ির সবাই ভাতঘুম দিচ্ছে, হুরও ঘুমাচ্ছে ওর মায়ের পাশে।
হুর আজ যতটুকু পেরেছে এডওয়ার্ডকে এড়িয়ে চলেছে।
সকালে হুর নিজের আক্কেল-জ্ঞান হারিয়ে এডওয়ার্ডকে তার চঞ্চল রূপ দেখিয়ে দিয়েছে—
এটা ভেবে হুরের লজ্জায় মরে যাওয়ার অবস্থা।
এডওয়ার্ডের করা সকালের ওই ঘটনা হুরকে অভিমানী করে তুলেছে,
তাই সে সকাল থেকে আর একবারও এডওয়ার্ডের সামনে যায়নি।

হুর যেন নিজের অজান্তেই এডওয়ার্ডের ওপর অভিমান করে ফেলেছে।

_____________

ভাগীরথী নদীর কিছুটা কাছে রয়েছে এক বিশাল বড় বটগাছ।
এই বটগাছের আসেপাশে কেউ আসা-যাওয়া করে না,
মূলত জিয়াগঞ্জের মানুষের ধারণা, এই গাছ ভূত-প্রেতের আস্তানা।
তাই কেউ ভুলেও এই জায়গায় পা-মাড়ায় না।
আর এই সুযোগ নিয়েই ইলতিয়াজ সিপাহিরা এই জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে।
মুর্শিদাবাদ থেকে সব সিপাহী চলে এসেছে, সাথে ক্লাইব নিজেও এসেছে,
কিন্তু এখনো এডওয়ার্ডের কোনো দেখা নেই।

ক্লাইব বটগাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।
আজ তার অনেক খাটুনি গেছে সিপাহিদের জিয়াগঞ্জে আনতে।
ক্লাইব ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ভাগীরথী নদীকে কইটা গালি দিলো ইংরেজিতে।
তার মতে, সব দোষ এই নদীর।
এই নদী না থাকলে তারা একদিনেই সৌন্য তৈরি করে একদিনেই জিয়াগঞ্জ দখল করে নিতে পারতো।
কিন্তু এই নদীর কারণে সিপাহিদের ভাগ করে করে জিয়াগঞ্জ পাঠানো হয়েছে।

ক্লাইবের গালি শুনে অন্য সিপাহিরা হাসছে,
ওইখান থেকে এক সিপাহী বলে উঠলো —
“গভর্নর ক্লাইব, আমরা তো জাহাজে ও আসতে পারতাম।, তাহলে আর কষ্ট করে এইভাবে ১০ ভাগে ভাগ হয়ে নৌকায় আসার দরকার হতো না,”

সিপাহিটির কথায় আরও কয়জন সিপাহী সহমত জানালো, তারা সবাই ক্লাইবের মুখপানে তাকিয়ে রইলো উত্তরের আশায়।
ক্লাইব সিপাহিটির প্রশ্নে সামান্য হাসলো, হেসে উত্তর দিলো —
“জাহাজে করে আসলে হয়তো এতক্ষণে তোমরা কেউ বেঁচে থাকতে না।
জিয়াগঞ্জের ডাকাতরা অনেক হুঁশিয়ার। তারা জাহাজ দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়তো এবং...”
এটা বলে আর বলতে পারলো না, এর আগেই এক গভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো —
“...এবং তোমাদের সবাইকে মেরে জাহাজ নিয়ে পালিয়ে যেত।”জাহাজে লুটতরাজ করতো,,

হঠাৎ কারো কণ্ঠে সবাই চমকে উঠলো।
সিপাহিরা নিজেদের পিস্তল আর তলোয়ারী বের করে নিলো।
ক্লাইবও উঠে দাঁড়ালো।
গম্ভীর কণ্ঠধারী ব্যক্তিটির দিকে তাকালো, দেখলো একজন কালো চাদর জড়ানো আগুন্তুক দাঁড়িয়ে আছে,
দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা ক্লাইবের যেন চেনা চেনা ঠেকলো।
হঠাৎ তার মাথায় আসলো — এডওয়ার্ডও তো এরকম এক চাদর নিয়ে মুসলিম পাড়ায় গিয়েছিল।
সঙ্গে সঙ্গে ক্লাইব আগুন্তুক এর দিকে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
সিপাহিরা সবাই গভর্নর ক্লাইবের আচরণে অবাক হয়ে গেল

ক্লাইব এর এইভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে এডওয়ার্ড নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো।
সে হাত দিয়ে ক্লাইব কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো —
"আমাকে কি তোমার বউ পেয়েছো নাকি? যে এইভাবে জড়িয়ে ধরে আছো?,,

ক্লাইব এডওয়ার্ড এর কথা শুনে চমৎকার হাসলো।
প্রায় একটা দিন ক্লাইব এডওয়ার্ড এর চিন্তায় মগ্ন ছিল,
মূলত সে খুবই ভয় পেয়েছিলো যখন শুনলো এডওয়ার্ড এর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না,
তাই এডওয়ার্ড কে দেখে এইভাবে জড়িয়ে ধরলো।
ক্লাইব এডওয়ার্ড এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো —
"সুলতান, আপনি ঠিক আছেন তো?"

এডওয়ার্ড গা ছাড়া ভঙ্গিতে বটগাছের দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠলো —
"তুমি কি চোখে কালা নাকি? দেখতে পাচ্ছো না আমি জীবন্ত তোমার সামনে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছি!"

ক্লাইব এডওয়ার্ড এর কথায় তেমন তোয়াক্কা করলো না।
এডওয়ার্ড বরাবরই তার সাথে এমনই কথা বলে,
তবে তাকে সে নিজের বন্ধুর মতই দেখে এডওয়ার্ড,
কিন্তু সেটা কখনো মুখে প্রকাশ করে না। তবে
ক্লাইব তা বোঝে।

অবাক হয়ে থাকা সিপাহিরা এতক্ষণে বুঝলো —
এটাই তাদের সুলতান এডওয়ার্ড ইলতিয়াজ।
তারা সবাই মাথা নিচু করে সম্মান জানালো।
এডওয়ার্ড ও মাথা নাড়ালো তাদের উদ্দেশ্যে।
তারপর বটগাছের শেকড়ের ওপর বসে বলে উঠলো —
"শুনো সবাই, কাল জিয়াগঞ্জে কোনো হামলা হবে না।
ক্লাইব ছাড়া সবাই ফিরে যাবে মুর্শিদাবাদে।"

এডওয়ার্ড এর এমন কথায় ক্লাইব এর সাথে সাথে সব সিপাহি চমকালো।
এডওয়ার্ড এর এভাবে মত বদলে যাওয়ায় তারা ভীষণ অবাক হলো।
ক্লাইব এডওয়ার্ড এর সামনে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে দাঁড়ালো, কোমরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে উঠলো —
"সুলতান, এসব কী বলছেন আপনি? হামলা হবে না কেন? আর..."
এইটুকু বলে আর বলতে পারলো না ক্লাইব,
এর আগেই এডওয়ার্ড তার কথা কেড়ে নিয়ে বলে উঠলো —
"আমি বলেছি তাই কোনো হামলা হবে না।"

এইটুকু বলে থামলো না এডওয়ার্ড,
তার তর্জনী আঙুল উঠিয়ে ক্লাইব এর উদ্দেশ্যে কিছু তিক্ত বাণী আওড়ালো —
"আর একটা প্রশ্নও না ক্লাইব। আমি যা বলেছি, সেটাই হবে।
সিপাহিদের মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দাও।
ওদের পাঠানোর পর আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থাও করে ফেলবে।
আর সিপাহিদের মাধ্যমে এই চিঠিটা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিও।"

এটা বলে এডওয়ার্ড তার কোমরে গুঁজে রাখা চিঠিটা ক্লাইব এর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
ক্লাইব ও তা সন্তপর্ণে নিলো।
চিঠিটা নিয়ে সে এডওয়ার্ড এর দিকে তাকালো,
তার চোখেমুখে ভীষণ উত্তেজনা —
কেন হঠাৎ এডওয়ার্ড তার সিদ্ধান্ত বদলে ফেললো?
আর এটা যদি সুলতান এলেনোর জানতে পারেন, তবে তিনি তার ছেলের উপর অনেক ক্ষেপে যাবেন — এটা নিশ্চিত।
এডওয়ার্ড ক্লাইব এর মুখোপানে দৃষ্টি দিলো,
সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ক্লাইব এর উত্তেজনা,কিন্তু সে এমন ভাবে বসে আছে যেনে সে কিচ্ছু বুঝতে পারছে নাহ।
আর সে মোটেও এখন বলবে না আসল কারণ —
আর সেটা নিঃসন্দেহে ইচ্ছাকৃতভাবেই।

ক্লাইব এর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে এডওয়ার্ড সামান্য মুচকি হাসলো,
তবে তা ক্লাইব এর অগোচরে।
ক্লাইব দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এডওয়ার্ড কে গিলছে, যেন আর কখনোই সে এডওয়ার্ড কে দেখেনি।

______________

ভাগীরথী নদীর তীরে ৭টা নৌকা দাঁড়িয়ে আছে।
এগুলো মুর্শিদাবাদ থেকে আনা নৌকা।
সব নৌকায় আস্তে আস্তে সব সিপাহি উঠে বসছে।
প্রায় ৭টি নৌকা ভর্তি হওয়ার পর, নৌকাগুলো নিজেদের গন্তব্যে পাড়ি দিলো।
সব সিপাহি যেতে পারেনি এখনো,
অনেক জন রয়ে গেছে — তারা আরেকবার নৌকা এলে চলে যাবে।

ক্লাইব এডওয়ার্ড এর পাশে বসে আছে।
মূলত সে এডওয়ার্ড এর থেকে জানতে চাইছে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে কেন নিলো।
এডওয়ার্ড নীরব।
ক্লাইব এডওয়ার্ড এর নিঃশব্দ বদনে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ এডওয়ার্ড ক্লাইব এর মুখোপানে তাকাতেই ক্লাইব থতমত খেয়ে গেলো,
সে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো।

এডওয়ার্ড এটা দেখে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠলো —
"আমার না হওয়া সন্তানদের মা কে পেয়ে গেছি তাই হামলা আপাতত বন্ধ রাখছি।"

চলবে,,,,,,,,,,,,

আপনারা চাইলে আমি উপন্যাস এ ইংরেজি Word use করতে পারি,যেহুতু উপন্যাস এ বেশির ভাগ মানুষ ঔ ইংরেজ,আর ইংরেজ রা ইংরেজি তে কথা বলতে পারে এটা সবাই জানে। যদি আপনারা চান তাহলে আমি ইংরেজি word use করবে আর না চাইলে করবো নাহ।

2 months ago (edited) | [YT] | 37

View 55 replies

Benjamin RIT

প্রেম ও প্রাসাদ
লিখিকা :জান্নাতুল মাওয়া
৮ম পর্ব

এডওয়ার্ড কিছুক্ষণ ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল,
"না মানে, আসলে... আমার রাতে অনেক শীত লাগছিল তো, তাই ওড়নাটা..."

এইটুকু বলেই আর কিছু বলতে পারল না সে।

হুর এর আগেই প্রশ্ন ছুড়ে মারল,
"কিন্তু আমার কামরায় তো লেপ ছিল!"

"না, আসলে... আমার একটু বেশিই শীত লাগছিল... তাই আরকি..."

হুর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো
"যান, হাত-মুখ ধুয়ে আসুন। আপনার আহার বৈঠকখানার চৌকিতে রেখে এসেছি আমি।"

এডওয়ার্ড হুরের এরকম আচরণে অবাক হল, সঙ্গে খুশিও। কারণ, কাল থেকেই সে চাচ্ছিল হুর যেন তার সঙ্গে সোজাসুজি কথা বলে, ভয় না পায়। আর এখন হুর ঠিক এডওয়ার্ডের মনমতো করেই কথা বলছে।

এডওয়ার্ড নাটকীয়ভাবে ঠোঁট বাঁ দিকে টেনে সামান্য হাসল, মাথা নেড়ে শাই জানিয়ে ঘরে ঢুকে হাত-মুখ ধুতে চলে গেলো।

হুর এডওয়ার্ড এর হাসি দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো । সে জানে নাহ, এই হাসিতে কী আছে—এত স্নিগ্ধ হাসি সে আর কখনও দেখেনি। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এডওয়ার্ড এক পাশে হাসে—এটা বরাবরই হুরকে মোহিত করে।

হঠাৎ হুরের মনে পড়ল, সে তো এখনো এডওয়ার্ডের কাছ থেকে তার ওড়নাটা নেয়নি! এটা মনে হতেই সে ঘরের ভেতরে ছুটে গেল।

এদিকে এডওয়ার্ড গোসলঘরে এসে থমকে গেল। হুরদের গোসলঘরটা তেমন বড় নয়। এক পাশে কল চেপে পানি তুলতে হয়, আর কলের সামান্য পাশেই সৌচাঘর।

এডওয়ার্ডের ভীষণ বিতৃষ্ণা এল এসব দেখে। এডওয়ার্ড এর নিজের প্রাসাদের কথা মনে পড়ল—তার প্রাসাদে বিশাল হাম্মামখানা রয়েছে তা ও আবার তার নিজের ব্যক্তিগত,প্রাসাদে সবকিছু অনেক সুন্দর আর গুছানো ! এসব ভাবতে ভাবতেই এডওয়ার্ড এর সরণে এলো, তার—হুর এতদিন এই জায়গায় থেকেছে! কত না কষ্ট হয়েছে ওর!

এইসব ভাবনাতেই বুকে ব্যাথা অনুভুত হলো এডওয়ার্ডের। সে কোনোমতেই ভেবে পায় নাহ তার হুর এসব জায়গায় কিভাবে দিন এর পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছে,সে যদি জানতো তার মনের ময়ূর পঙ্খি এই খানে আছে তাহলে সে অনেক আগেই তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতো। এইভাবে এখানে থেকে কষ্ট পেতে দিতো নাহ।
এডওয়ার্ড সিদ্ধান্ত নিল—যত তারাতারি সম্ভব হুরকে নিজের করে নিতে হবে।

,,,,,,

হুর গোসলঘরের সামনে এসে দাঁড়াল। গোসলঘরের দরজাটা বন্ধ। ভিতর থেকে অদখ্য হাতে কল চাপার শব্দ আসছে। হুর কান পেতে শুনল।

হঠাৎ হুরের মাথায় এল—
এডওয়ার্ড যদি এখন মুখ ধুয়ে তার ওড়নাটায়কে গামছা বানিয়ে মুখ মুছে ফেলে?

নিজের আবল তাবল চিন্তায় নিজেই হায়হুতাশ করলো হুর।আর মনে মনে নিজেকে আশ্বাস দিলো এডওয়ার্ড খুব ভালো ছেলে, এমন কিছু সে কখনোই করবে নাহ।
আর যদি এমন হয়, তবে সে এডওয়ার্ড কর ওড়নাটা ধুতে দিবে,এবং সেটা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখবে।
হুর কিছু সময়ের জন্য কল্পনায় ডুব দিলো

কল্পনা,,,
হুর আমি আর পারবো নাহ, দোয়া করো আমার উপর, আর কয়বার ধৌত করবো, দোয়া করে একটু রেহাি দাও আমায়, আমি অনেক ক্লান্ত। এটা বলেয় এডওয়ার্ড গোসলঘরের মেজেতে বসে পড়লো।
হুর এটা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে বলে উঠলো
একদম ঠিক হয়েছে বজ্জাত লোক,একেতো আপনি আমার কামরা দখল করেছেন দ্বিতীয়তে আবার আমার ওরনা জড়িয়ে ঘুমিয়েছেন, তৃতীয়তো আবার আমার সেই ওড়নাকে গামছা বানিয়ে তার মধ্যে মুখ মুছেছেন। এগুলো কত বড় অন্যায় সেটা কি আপনি জানেন? আজ যদি আমি কনো রাজকন্যা হতাম তাহলে আপনাকে শুলে চড়াতাম এই বলেই সামনে এগিয়ে গিয়ে এডওয়ার্ড এর গালে ঠাশ করে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।

হঠাৎ হুর এর কল্পনার ছেদ ঘটিয়ে গোসলঘরের দরজা খুলে এডওয়ার্ড এর আগমন গঠলো।হুর এডওয়ার্ড কে দেখে চুপশে গেলো।

এডওয়ার্ড হুর কে এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকালো, হুরের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে এর আগেই হুর চিৎকার করে বলে উঠলো
আমার ওড়না , আপনি আমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছেছেন তাই নাহ?

হঠাৎ হুর এর এমন প্রশ্নে,এডওয়ার্ড চমকে উঠলো, সে ধরা খাওয়া মুখ নিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো
"না না আমি মোটে ও এমন কাজ করেনি বিশ্বাস করো "
"দেখুন মোটে ও আমার সাথে মিথ্যা বলতে আসবেন নাহ বলে দিলাম, আমাকে কি বোকা পেয়েছেন নাকি হু? যে কেও ওড়না দেখে বলে দিতে পারবে, যে এখানে কেও মুখ মুছেছে।

এডওয়ার্ড খাবড়ে গেলো, হুর মোটেও ভুল কিছু বলেনি, এতক্ষণ গোসল ঘরে হাত মুখ ধোঁয়ার পর আসে পাশে তোয়ালে না পেয়ে হুর এর ওড়নার সুযোগ নিলো সে।সেই সময় হুর এর ওড়না দেয়নি কারন সে ভেবেছে হাত মুখ ধুয়ে হুরের কামরায় গিয়ে ওড়নাটা যেখানে পেয়েছে সেখানে রেখে আসবে, কিন্তু তখন উপায় না পেয়ে সে ওড়নায় মুখ মুছে পেলেছে।
এডওয়ার্ড হাজারো আখ্যেপ নিয়ে মনে মনে বলে উঠলো
ময়ূরী! তুমি শুধু ওড়নায় লেগে থাকা জল গুলোই দেখলে, ঔ ওড়নায় যে আমার শতখানেক চুমু রয়েছে সেটা আর দেখলে নাহ। মনের কথা মনে চেপে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।

আপনি অনেক খারাপ, আমি আপনাকে কত ভালো ভেবে ছিলাম, কিন্তু নাহ আপনি মোটেও ভালো নাহ।

হুর কান্নামিস্রিত গলায় কথাটা বলে, এডওয়ার্ড এর হাত থেকে ওড়নাটা নিয়ে তার আম্মার কক্ষের দিকে দৌড় দিল।

এডওয়ার্ড হুরের কান্ডে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে কিছুই বুঝতে পারল না। হুরের যাওয়ার পানে নির্বিকার তাকিয়ে রইলো সে।
হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই এডওয়ার্ড
সামান্য একটুখানি হাসি দিয়ে বৈঠকখানায় গিয়ে বসল।

বৈঠকখানার চৌকির উপর রাখা একটা থালা দেখতে পেল।

থালাটা দেখেই এডওয়ার্ডের মনে পড়ল হুরের বলা কথা—“আপনার আহার রেখেছি”।

হুরের কথা মনে পড়তেই তার ঠোঁট আবার প্রসারিত হল।

হাজারো বিতৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও এডওয়ার্ড খাবার টুকু গিললো —এই ঘরে তার ময়ূরী ছাড়া সবকিছুই তার বিতৃষ্ণার অংশ।

-------------------------

মুর্শিদাবাদের বুকে অবস্থিত ইলতিয়াজ গড়, যার স্থাপত্য আজ কিংবা কালকের নয়—প্রায় এক যুগ আগের তৈরি এক প্রাসাদ।

সুলতান সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ তার নিজের ব্যক্তিগত রুচিতে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এক সময় এই প্রাসাদের নাম ছিল ক্লাইভ গড়, যার অর্থ ছিল—ক্লাইভের প্রাসাদ।

এই নাম স্থায়ী ছিল মাত্র ১৭ বছর, অর্থাৎ সুলতান উইব্রান এর শাসনকাল পর্যন্ত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র এডওয়ার্ড ইলতিয়াজ সিংহাসনে আরোহণ করেন।

মাত্র ২০ বছর বয়সেই তাঁকে 'সুলতান' উপাধি নিতে হয়, আর আজ ৮ বছর পেরিয়ে গেছে তাঁর শাসনের।

এই আট বছরে প্রাসাদটির চেহারা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। একদা যেটি ছিল হলুদ রঙের ক্লাইভ প্রাসাদ, আজ তা রূপান্তরিত হয়ে দাঁড়িয়েছে—ইলতিয়াজ গড়।

সুলতান এডওয়ার্ডের হলুদ রঙ অপছন্দ ছিল বলেই তিনি সেটিকে সাদা রঙে রাঙিয়ে দেন। আর এই পরিবর্তনের পর প্রাসাদের সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

বাংলার মানুষ যতই ইংরেজ শাসকদের ঘৃণা করুক না কেন, সুলতান এডওয়ার্ডের রুচি ও রীতির প্রতি একধরনের মুগ্ধতা তাদের ছিলই।

ইলতিয়াজ গড় ছিল বিরাট আকৃতির। তার মধ্যভাগে একটি বিশাল সাদা গম্বুজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, আর একটুর জন্য হইতো আকাশ ছুঁয়ে ফেলতো,

গম্বুজটির শীর্ষে রয়েছে একটি নিল রঙ এর খ্রিস্টান ক্রুশ ✝️ , যা দূর থেকে ঝলমল আলোয় চকচক করে। গম্বুজ এর চারপাশে আটটি মিনার, প্রতিটিই সাদা ও সুউচ্চ।

প্রাসাদের বাইরের ফুলের বাগান ছিল প্রাসাদ এর সৌন্দর্যের আসল অলংকার। এখানে কেবল দেশি ফুল নয়, ছিল নানা বিদেশি ফুল আর ফলের গাছ—

প্রাসাদের পেছনে রয়েছে একটি বড় আমবাগান। এই আমবাগানে রয়েছে হাজারো রহস্য, যা সবার অজানা। মূলত এই সবকিছু মিলিয়ে প্রাসাদের সৌন্দর্য অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
,,,,,,,,,

ইলতিয়াজ গড়ে আজ সব কিছু নীরব, কারো মুখে কোনো বাক্য নেই। অন্দর মহলে কয়েকজন কৃষক বসে আছে, তাদের চোখে মুখে ভীষণ ভয়।
হঠাৎ অন্দর মহলের দরজা খোলার আওয়াজে সবাই সেই দিকে নজর দিল,
এক নারী প্রবেশ করেছে অন্দর মহলে,
নারীটি দেখতে ভীষণ সুন্দর,
যে কেউ এক নজরে দেখেই বলবে—এ কোনো অপ্সরা।
গায়ের রং পোরসা, তার গায়ের রং জানিয়ে দিচ্ছে সে এই মাটির নয়,
পোরসা গায়ে সাদা এক শাড়ি,
যে শাড়ির উপর ঠাঁই পেয়েছে নানা হীরে-মুক্ত।
নারীটির মুখের ভঙ্গি খুবই কঠিন।

অন্দর মহলে এতক্ষণ বসে থাকা কৃষকেরা নারীটিকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল,
মাথা নিচু করে সম্মান জানালো তাকে।
নারীটি এসব তোয়াক্কা না করে,
সবার মধ্যবর্তী স্থানে থাকা কাঠের কারুকাজ করা কেদারায় গিয়ে বসলো,
বসার ধরনটা ও খুবই নাটকীয়।
নারীটি কেদারায় বসার পর হাত দিয়ে সবাইকে বসার ইশারা জানালো,
হাতের ইশারা পেয়ে কৃষকেরাও বসলো।

চলবে,,,,,,,,

😥😥😥😥 খুবই বিস্রি একটা পার্ট ছিল এটা, আর প্রাসাদ এর বর্ণনার কথা জানাবেন আমায় এই প্রাসাদ এর বর্ণনার কারনে এই পার্ট লিখতে অনেক Late হয়েছে 😥😥😥😥.

2 months ago (edited) | [YT] | 41

View 63 replies

Benjamin RIT

🍺 trend এর রহস্য 😓😓😓😓

‪@Kim_ariya_queen‬
Apu ei naw dekho tumi

🤗🤗🤗

2 months ago (edited) | [YT] | 57

View 91 replies

Benjamin RIT

প্রেম ও প্রাসাদ
লিখিকা:জান্নাতুল মাওয়া
৭ম পর্ব

হুর তার আম্মার কথায় সায় জানালো। আয়েশা খাতুন চলে যেতে হুর ঘরে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু টুকিটাকি কাজ সেরে এডওয়ার্ডের ঊষা আহার এর থালাটা বৈঠকখানার চৌকির উপর রাখল, যাতে এডওয়ার্ড ঘুম থেকে উঠে খেতে বসতে পারে। তবে হুরের ভীষণ লজ্জা লাগছে—সে বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে এডওয়ার্ডকে খেতে বলবে। এমনিতেই এডওয়ার্ডের সামনে গেলেই তার মুখ থেকে কথা বের হয় না, তার উপর আবার তাকে বলতে হবে—‘খেয়ে নিন’। এখন এই লজ্জায় হুরের অবস্থা প্রায় যায় যায়—কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

হুর কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় দাঁড়িয়ে থেকে ওর কক্ষের দিকে হাঁটা ধরল, মূলত দেখতে চাচ্ছে এডওয়ার্ড উঠেছে কিনা। কক্ষের সামনে এসে থামল হুর। দেখল দরজা এখনো বন্ধ, মানে এডওয়ার্ড এখনো ঘুমাচ্ছে—এটা ভেবে হুর কক্ষের সামনে থেকে সরে গেল। কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় বসে রইল এডওয়ার্ডের অপেক্ষায়, কিন্তু এডওয়ার্ড তো রাজ্যের ঘুমে ডুবে আছে। বিরক্তিতে হুর তার আম্মার কক্ষ থেকে একটা খাতা নিয়ে এলো। সূঁই-সুতা দিয়ে ফুল আঁকবে বলে। খাতা নিয়ে হুর বাইরে চলে এলো।

হুরদের ঘরের সামনে তার আব্বা বসার জন্য কিছু ইট দিয়ে মাচার মতো একটা সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তারা মা-মেয়ে বসে থাকতে পারে। হুর সেখানে বসে বসে খাতায় সেলাই করতে লাগল।

----------------------------

"হুর হুর! দাঁড়াও বলছি! আমার জন্য দাঁড়াও!"

"উহু পারবো নাহ আমি, আপনি পারলে ধরে নিন!"—এই বলে হুর খিলখিল করে হেসে উঠে আবার দৌওড়াতে লাগলো।

"আস্তে দৌড়াও হুর, পড়ে যাবে তো!"—এডওয়ার্ড বলতেই দেরি, আর হুর ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে দেরি হল না।

"হু-উ-উ-র!"...

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল এডওয়ার্ডের—এরকমই এক স্বপ্নে। এডওয়ার্ড দ্রুত গতিতে চৌকি থেকে উঠে কক্ষের দরজা খুলে পুরো ঘরে হুরকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু পেল না। হঠাৎ বৈঠকখানায় যেতে গিয়ে দেখল—বাইরে কারো ওড়নার এক টুকরো অংশ দেখা যাচ্ছে। এডওয়ার্ড দ্রুত বাইরে চলে গেল। বাইরে এসে দেখল, হুর বসে বসে কিছু একটা বারবার ঢুকাচ্ছে আর বের করছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠায় স্পষ্ট দেখলো না সে। তবে ভালো করে দেখতে হুরের আরও কাছে গিয়ে দাঁড়াল। একটু ভালো করে দেখে বুঝল, সূঁই-সুতা দিয়ে হুর খাতায় ফুল তুলছে। হুরকে ঠিকঠাক দেখে এডওয়ার্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

কিচ্ছুক্ষণ হুর এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এডওয়ার্ড। হুরের মাথায় ওড়না জোড়ানো তাই ঠিক ঠাক হুরের মুখ দেখতে পাচ্ছে নাহ সে। আরো কিচ্ছুক্ষণ হুরের পানে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো এডওয়ার্ড মূলত এখন তাকে চোখে ভালো ভাবে জল দিতে হবে, চোখে ভীষণ অস্পষ্ট দেখছে সে, তাই পিছনে ঘুরলো গোসল ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য।

"আহহহ!"

হঠাৎ কারো মৃদু চিৎকার শুনে এডওয়ার্ডের পা থমকে গেল। পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল—হুর তার ডান হাত চেপে ধরে বসে আছে। এটা দেখে এডওয়ার্ডের মুখ থেকে যেন রক্ত সরে গেল। সে দৌড়ে এসে হুরের ব্যথা পাওয়া হাতটা চেপে ধরল। ডান হাতে সামান্য সূঁই বিঁধেছে, আর সে কারণেই গোল আকৃতির একটুখানি রক্ত দেখা যাচ্ছে।

এডওয়ার্ড এই সামান্য রক্ত দেখে দিশেহারা হয়ে গেল। এমন না যে সে আগে রক্ত দেখেনি, বা রক্ত দেখতে পারে না—এই সামান্য রক্তের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রক্ত দেখেছে সে। এডওয়ার্ড আজ পর্যন্ত কত মানুষের শরীর ছিন্নভিন্ন করেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু আজ এই সামান্য রক্ত যেন এডওয়ার্ড এর পুরো শরীরের শিরা উপশিরা নাড়িয়ে দিলো।

এডওয়ার্ড উদব্রান্তের নেয় হুরের দিকে ছুটে আসলো।এসেই হুরের ডান হাতের মাঝখানের আঙুলটা নিজের মুখে নিয়ে নিল।

হুর হঠাৎ এডওয়ার্ড কে দেখে চমকে উঠলো। এতক্ষণ সে খুনক্ষরে ও টের পাইনি এডওয়ার্ড এর উপস্থিতির। এতক্ষণ সে খুভ মনযোগ দিয়ে খাতায় ফুল তুলছে। হুর এডওয়ার্ডের সকল কর্মকান্ড অবাক নয়নে দেখছে। এডওয়ার্ডের হাত ধরা দেখে হুর থমকে গেছে—মুখ দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না যেন।

এডওয়ার্ড এভাবে তার আঙুল মুখে নেওয়াটা হুরের কাছে ভীষণ অস্বাভাবিক লাগল, তাই সে দ্রুত নিজের আঙুল বের করে আনল এডওয়ার্ডের মুখ থেকে।

হুরের কাজে মনোযোগ ভাঙল এডওয়ার্ডের। এতক্ষণ ধরে নিজের কর্মকাণ্ডের কথা মনে পড়তেই এডওয়ার্ড চারপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাল। এখন যদি এই দৃশ্যটা হুরের বাবা বা মা দেখে ফেলতো, তাহলে নিঃসন্দেহে এডওয়ার্ডকে আর ঘরে বসিয়ে রাখবে না তারা।

এডওয়ার্ড উঠে বসল। হুর এডওয়ার্ডকে উঠতে দেখে তার দিকে তাকাল, সঙ্গে সঙ্গে হুর জমকে উঠল...

এডওয়ার্ডকে দাড়াতে দেখে হুর ও দাঁড়িয়ে গেল। বিস্ময়ে চোখ বড় করে সে প্রশ্ন করল,

"আমার ওড়না! আমার ওড়নাটা আপনার কাছে কেন? আর এইভাবে পেঁচিয়ে রেখেছেনি বা কেন?"

হুরের কথায় এডওয়ার্ড সচকিত হয়ে মাথা নিচু করে নিজের বুকের দিকে তাকাল। লাল রঙের সূতির কারুকাজ করা একটি ওড়না তার বুকে এলোমেলোভাবে পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে।

এডওয়ার্ডের মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। রাতের খাবার শেষে হামিদ মোল্লা যখন তাকে হুরের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন সে ঘরে ঢুকে হুরের প্রতিটি জিনিসপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিল। সেই সময়ই এই ওড়নাটি হাতে নিয়েছিলো,প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ওড়নাটির গ্রান নিয়েছিল সে। এরপর সে ওড়নাটি বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। আর হইতো ঘুমের ঘোরে সেটি এভাবেই বুকে পেঁচিয়ে গিয়েছিল।

চলবে...........

2 months ago (edited) | [YT] | 41

View 41 replies