হুর তার আম্মার কথায় সায় জানালো। আয়েশা খাতুন চলে যেতে হুর ঘরে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু টুকিটাকি কাজ সেরে এডওয়ার্ডের ঊষা আহার এর থালাটা বৈঠকখানার চৌকির উপর রাখল, যাতে এডওয়ার্ড ঘুম থেকে উঠে খেতে বসতে পারে। তবে হুরের ভীষণ লজ্জা লাগছে—সে বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে এডওয়ার্ডকে খেতে বলবে। এমনিতেই এডওয়ার্ডের সামনে গেলেই তার মুখ থেকে কথা বের হয় না, তার উপর আবার তাকে বলতে হবে—‘খেয়ে নিন’। এখন এই লজ্জায় হুরের অবস্থা প্রায় যায় যায়—কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
হুর কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় দাঁড়িয়ে থেকে ওর কক্ষের দিকে হাঁটা ধরল, মূলত দেখতে চাচ্ছে এডওয়ার্ড উঠেছে কিনা। কক্ষের সামনে এসে থামল হুর। দেখল দরজা এখনো বন্ধ, মানে এডওয়ার্ড এখনো ঘুমাচ্ছে—এটা ভেবে হুর কক্ষের সামনে থেকে সরে গেল। কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় বসে রইল এডওয়ার্ডের অপেক্ষায়, কিন্তু এডওয়ার্ড তো রাজ্যের ঘুমে ডুবে আছে। বিরক্তিতে হুর তার আম্মার কক্ষ থেকে একটা খাতা নিয়ে এলো। সূঁই-সুতা দিয়ে ফুল আঁকবে বলে। খাতা নিয়ে হুর বাইরে চলে এলো।
হুরদের ঘরের সামনে তার আব্বা বসার জন্য কিছু ইট দিয়ে মাচার মতো একটা সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তারা মা-মেয়ে বসে থাকতে পারে। হুর সেখানে বসে বসে খাতায় সেলাই করতে লাগল।
----------------------------
"হুর হুর! দাঁড়াও বলছি! আমার জন্য দাঁড়াও!"
"উহু পারবো নাহ আমি, আপনি পারলে ধরে নিন!"—এই বলে হুর খিলখিল করে হেসে উঠে আবার দৌওড়াতে লাগলো।
"আস্তে দৌড়াও হুর, পড়ে যাবে তো!"—এডওয়ার্ড বলতেই দেরি, আর হুর ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে দেরি হল না।
"হু-উ-উ-র!"...
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল এডওয়ার্ডের—এরকমই এক স্বপ্নে। এডওয়ার্ড দ্রুত গতিতে চৌকি থেকে উঠে কক্ষের দরজা খুলে পুরো ঘরে হুরকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু পেল না। হঠাৎ বৈঠকখানায় যেতে গিয়ে দেখল—বাইরে কারো ওড়নার এক টুকরো অংশ দেখা যাচ্ছে। এডওয়ার্ড দ্রুত বাইরে চলে গেল। বাইরে এসে দেখল, হুর বসে বসে কিছু একটা বারবার ঢুকাচ্ছে আর বের করছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠায় স্পষ্ট দেখলো না সে। তবে ভালো করে দেখতে হুরের আরও কাছে গিয়ে দাঁড়াল। একটু ভালো করে দেখে বুঝল, সূঁই-সুতা দিয়ে হুর খাতায় ফুল তুলছে। হুরকে ঠিকঠাক দেখে এডওয়ার্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
কিচ্ছুক্ষণ হুর এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এডওয়ার্ড। হুরের মাথায় ওড়না জোড়ানো তাই ঠিক ঠাক হুরের মুখ দেখতে পাচ্ছে নাহ সে। আরো কিচ্ছুক্ষণ হুরের পানে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো এডওয়ার্ড মূলত এখন তাকে চোখে ভালো ভাবে জল দিতে হবে, চোখে ভীষণ অস্পষ্ট দেখছে সে, তাই পিছনে ঘুরলো গোসল ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
"আহহহ!"
হঠাৎ কারো মৃদু চিৎকার শুনে এডওয়ার্ডের পা থমকে গেল। পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল—হুর তার ডান হাত চেপে ধরে বসে আছে। এটা দেখে এডওয়ার্ডের মুখ থেকে যেন রক্ত সরে গেল। সে দৌড়ে এসে হুরের ব্যথা পাওয়া হাতটা চেপে ধরল। ডান হাতে সামান্য সূঁই বিঁধেছে, আর সে কারণেই গোল আকৃতির একটুখানি রক্ত দেখা যাচ্ছে।
এডওয়ার্ড এই সামান্য রক্ত দেখে দিশেহারা হয়ে গেল। এমন না যে সে আগে রক্ত দেখেনি, বা রক্ত দেখতে পারে না—এই সামান্য রক্তের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রক্ত দেখেছে সে। এডওয়ার্ড আজ পর্যন্ত কত মানুষের শরীর ছিন্নভিন্ন করেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু আজ এই সামান্য রক্ত যেন এডওয়ার্ড এর পুরো শরীরের শিরা উপশিরা নাড়িয়ে দিলো।
এডওয়ার্ড উদব্রান্তের নেয় হুরের দিকে ছুটে আসলো।এসেই হুরের ডান হাতের মাঝখানের আঙুলটা নিজের মুখে নিয়ে নিল।
হুর হঠাৎ এডওয়ার্ড কে দেখে চমকে উঠলো। এতক্ষণ সে খুনক্ষরে ও টের পাইনি এডওয়ার্ড এর উপস্থিতির। এতক্ষণ সে খুভ মনযোগ দিয়ে খাতায় ফুল তুলছে। হুর এডওয়ার্ডের সকল কর্মকান্ড অবাক নয়নে দেখছে। এডওয়ার্ডের হাত ধরা দেখে হুর থমকে গেছে—মুখ দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না যেন।
এডওয়ার্ড এভাবে তার আঙুল মুখে নেওয়াটা হুরের কাছে ভীষণ অস্বাভাবিক লাগল, তাই সে দ্রুত নিজের আঙুল বের করে আনল এডওয়ার্ডের মুখ থেকে।
হুরের কাজে মনোযোগ ভাঙল এডওয়ার্ডের। এতক্ষণ ধরে নিজের কর্মকাণ্ডের কথা মনে পড়তেই এডওয়ার্ড চারপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাল। এখন যদি এই দৃশ্যটা হুরের বাবা বা মা দেখে ফেলতো, তাহলে নিঃসন্দেহে এডওয়ার্ডকে আর ঘরে বসিয়ে রাখবে না তারা।
এডওয়ার্ড উঠে বসল। হুর এডওয়ার্ডকে উঠতে দেখে তার দিকে তাকাল, সঙ্গে সঙ্গে হুর জমকে উঠল...
এডওয়ার্ডকে দাড়াতে দেখে হুর ও দাঁড়িয়ে গেল। বিস্ময়ে চোখ বড় করে সে প্রশ্ন করল,
"আমার ওড়না! আমার ওড়নাটা আপনার কাছে কেন? আর এইভাবে পেঁচিয়ে রেখেছেনি বা কেন?"
হুরের কথায় এডওয়ার্ড সচকিত হয়ে মাথা নিচু করে নিজের বুকের দিকে তাকাল। লাল রঙের সূতির কারুকাজ করা একটি ওড়না তার বুকে এলোমেলোভাবে পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে।
এডওয়ার্ডের মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। রাতের খাবার শেষে হামিদ মোল্লা যখন তাকে হুরের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন সে ঘরে ঢুকে হুরের প্রতিটি জিনিসপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিল। সেই সময়ই এই ওড়নাটি হাতে নিয়েছিলো,প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ওড়নাটির গ্রান নিয়েছিল সে। এরপর সে ওড়নাটি বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। আর হইতো ঘুমের ঘোরে সেটি এভাবেই বুকে পেঁচিয়ে গিয়েছিল।
Benjamin RIT
প্রেম ও প্রাসাদ
লিখিকা:জান্নাতুল মাওয়া
৭ম পর্ব
হুর তার আম্মার কথায় সায় জানালো। আয়েশা খাতুন চলে যেতে হুর ঘরে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু টুকিটাকি কাজ সেরে এডওয়ার্ডের ঊষা আহার এর থালাটা বৈঠকখানার চৌকির উপর রাখল, যাতে এডওয়ার্ড ঘুম থেকে উঠে খেতে বসতে পারে। তবে হুরের ভীষণ লজ্জা লাগছে—সে বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে এডওয়ার্ডকে খেতে বলবে। এমনিতেই এডওয়ার্ডের সামনে গেলেই তার মুখ থেকে কথা বের হয় না, তার উপর আবার তাকে বলতে হবে—‘খেয়ে নিন’। এখন এই লজ্জায় হুরের অবস্থা প্রায় যায় যায়—কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
হুর কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় দাঁড়িয়ে থেকে ওর কক্ষের দিকে হাঁটা ধরল, মূলত দেখতে চাচ্ছে এডওয়ার্ড উঠেছে কিনা। কক্ষের সামনে এসে থামল হুর। দেখল দরজা এখনো বন্ধ, মানে এডওয়ার্ড এখনো ঘুমাচ্ছে—এটা ভেবে হুর কক্ষের সামনে থেকে সরে গেল। কিছুক্ষণ বৈঠকখানায় বসে রইল এডওয়ার্ডের অপেক্ষায়, কিন্তু এডওয়ার্ড তো রাজ্যের ঘুমে ডুবে আছে। বিরক্তিতে হুর তার আম্মার কক্ষ থেকে একটা খাতা নিয়ে এলো। সূঁই-সুতা দিয়ে ফুল আঁকবে বলে। খাতা নিয়ে হুর বাইরে চলে এলো।
হুরদের ঘরের সামনে তার আব্বা বসার জন্য কিছু ইট দিয়ে মাচার মতো একটা সিঁড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে তারা মা-মেয়ে বসে থাকতে পারে। হুর সেখানে বসে বসে খাতায় সেলাই করতে লাগল।
----------------------------
"হুর হুর! দাঁড়াও বলছি! আমার জন্য দাঁড়াও!"
"উহু পারবো নাহ আমি, আপনি পারলে ধরে নিন!"—এই বলে হুর খিলখিল করে হেসে উঠে আবার দৌওড়াতে লাগলো।
"আস্তে দৌড়াও হুর, পড়ে যাবে তো!"—এডওয়ার্ড বলতেই দেরি, আর হুর ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে দেরি হল না।
"হু-উ-উ-র!"...
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল এডওয়ার্ডের—এরকমই এক স্বপ্নে। এডওয়ার্ড দ্রুত গতিতে চৌকি থেকে উঠে কক্ষের দরজা খুলে পুরো ঘরে হুরকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু পেল না। হঠাৎ বৈঠকখানায় যেতে গিয়ে দেখল—বাইরে কারো ওড়নার এক টুকরো অংশ দেখা যাচ্ছে। এডওয়ার্ড দ্রুত বাইরে চলে গেল। বাইরে এসে দেখল, হুর বসে বসে কিছু একটা বারবার ঢুকাচ্ছে আর বের করছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠায় স্পষ্ট দেখলো না সে। তবে ভালো করে দেখতে হুরের আরও কাছে গিয়ে দাঁড়াল। একটু ভালো করে দেখে বুঝল, সূঁই-সুতা দিয়ে হুর খাতায় ফুল তুলছে। হুরকে ঠিকঠাক দেখে এডওয়ার্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
কিচ্ছুক্ষণ হুর এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এডওয়ার্ড। হুরের মাথায় ওড়না জোড়ানো তাই ঠিক ঠাক হুরের মুখ দেখতে পাচ্ছে নাহ সে। আরো কিচ্ছুক্ষণ হুরের পানে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো এডওয়ার্ড মূলত এখন তাকে চোখে ভালো ভাবে জল দিতে হবে, চোখে ভীষণ অস্পষ্ট দেখছে সে, তাই পিছনে ঘুরলো গোসল ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্য।
"আহহহ!"
হঠাৎ কারো মৃদু চিৎকার শুনে এডওয়ার্ডের পা থমকে গেল। পেছনে ঘুরতেই চমকে উঠল—হুর তার ডান হাত চেপে ধরে বসে আছে। এটা দেখে এডওয়ার্ডের মুখ থেকে যেন রক্ত সরে গেল। সে দৌড়ে এসে হুরের ব্যথা পাওয়া হাতটা চেপে ধরল। ডান হাতে সামান্য সূঁই বিঁধেছে, আর সে কারণেই গোল আকৃতির একটুখানি রক্ত দেখা যাচ্ছে।
এডওয়ার্ড এই সামান্য রক্ত দেখে দিশেহারা হয়ে গেল। এমন না যে সে আগে রক্ত দেখেনি, বা রক্ত দেখতে পারে না—এই সামান্য রক্তের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রক্ত দেখেছে সে। এডওয়ার্ড আজ পর্যন্ত কত মানুষের শরীর ছিন্নভিন্ন করেছে তার হিসেব নেই। কিন্তু আজ এই সামান্য রক্ত যেন এডওয়ার্ড এর পুরো শরীরের শিরা উপশিরা নাড়িয়ে দিলো।
এডওয়ার্ড উদব্রান্তের নেয় হুরের দিকে ছুটে আসলো।এসেই হুরের ডান হাতের মাঝখানের আঙুলটা নিজের মুখে নিয়ে নিল।
হুর হঠাৎ এডওয়ার্ড কে দেখে চমকে উঠলো। এতক্ষণ সে খুনক্ষরে ও টের পাইনি এডওয়ার্ড এর উপস্থিতির। এতক্ষণ সে খুভ মনযোগ দিয়ে খাতায় ফুল তুলছে। হুর এডওয়ার্ডের সকল কর্মকান্ড অবাক নয়নে দেখছে। এডওয়ার্ডের হাত ধরা দেখে হুর থমকে গেছে—মুখ দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না যেন।
এডওয়ার্ড এভাবে তার আঙুল মুখে নেওয়াটা হুরের কাছে ভীষণ অস্বাভাবিক লাগল, তাই সে দ্রুত নিজের আঙুল বের করে আনল এডওয়ার্ডের মুখ থেকে।
হুরের কাজে মনোযোগ ভাঙল এডওয়ার্ডের। এতক্ষণ ধরে নিজের কর্মকাণ্ডের কথা মনে পড়তেই এডওয়ার্ড চারপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাল। এখন যদি এই দৃশ্যটা হুরের বাবা বা মা দেখে ফেলতো, তাহলে নিঃসন্দেহে এডওয়ার্ডকে আর ঘরে বসিয়ে রাখবে না তারা।
এডওয়ার্ড উঠে বসল। হুর এডওয়ার্ডকে উঠতে দেখে তার দিকে তাকাল, সঙ্গে সঙ্গে হুর জমকে উঠল...
এডওয়ার্ডকে দাড়াতে দেখে হুর ও দাঁড়িয়ে গেল। বিস্ময়ে চোখ বড় করে সে প্রশ্ন করল,
"আমার ওড়না! আমার ওড়নাটা আপনার কাছে কেন? আর এইভাবে পেঁচিয়ে রেখেছেনি বা কেন?"
হুরের কথায় এডওয়ার্ড সচকিত হয়ে মাথা নিচু করে নিজের বুকের দিকে তাকাল। লাল রঙের সূতির কারুকাজ করা একটি ওড়না তার বুকে এলোমেলোভাবে পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে।
এডওয়ার্ডের মনে পড়ে গেল গত রাতের কথা। রাতের খাবার শেষে হামিদ মোল্লা যখন তাকে হুরের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন সে ঘরে ঢুকে হুরের প্রতিটি জিনিসপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছিল। সেই সময়ই এই ওড়নাটি হাতে নিয়েছিলো,প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ওড়নাটির গ্রান নিয়েছিল সে। এরপর সে ওড়নাটি বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। আর হইতো ঘুমের ঘোরে সেটি এভাবেই বুকে পেঁচিয়ে গিয়েছিল।
চলবে...........
2 months ago (edited) | [YT] | 41