ছোট গল্প- তুমি আমার নীলচে বিকেল লেখিকা: মারজিয়া আক্তার (My Birthday Special)
সাবিহা ইসলাম আলভি, সবার কাছে “সাবিহা”, একেবারেই সাধারণ একটি মেয়ে। চশমা পরা, হাসলে গালে ছোট্ট টোল পড়ে যায়, আর কথায় অদ্ভুত এক মিষ্টি সুর। সে সবসময় লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ে। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সে খুব একটা ভাবে না, বরং বই আর কফিই তার সব।
অন্যদিকে আরিয়ান হোসাইন রেহান, কলেজের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছেলে। লম্বা, স্মার্ট, ক্রিকেট খেলে দারুণ। কিন্তু জনপ্রিয়তার ভিড়েও তার চোখে সবসময় এক ধরনের শান্ত খোঁজ থাকে—যেন কাউকে খুঁজছে।
তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল একেবারে অদ্ভুতভাবে।
একদিন লাইব্রেরিতে সাবিহা একটা পুরনো বই খুঁজছিল। উপরের শেলফে বইটা রাখতে গিয়ে হঠাৎ করে হাত ফসকে বই পড়ে গেল। ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর— “সাবধান! আমি ধরছি।”
আরিয়ানই সেটা ধরেছিল। তাদের চোখ হঠাৎ মিলল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুজনেই থমকে গেল। “থ্যাঙ্ক ইউ…” সাবিহা আস্তে বললো। “নো প্রবলেম। তুমি সবসময় এত বই নিয়ে থাকো?” আরিয়ান মৃদু হেসে বললো। সাবিহা একটু লজ্জা পেয়ে বইটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। “আমি বই ছাড়া থাকতে পারি না।”
সেদিন থেকেই শুরু হলো তাদের গল্প।
প্রথমে তারা শুধু হালকা কথায় সীমাবদ্ধ থাকলো। লাইব্রেরিতে দেখা হলে দুটো লাইন, ক্যাফেটেরিয়ায় হাই-হ্যালো। ধীরে ধীরে কথোপকথন লম্বা হতে লাগলো।
একদিন কফি শপে আরিয়ান হেসে বললো, “জানো, তোমার হাসি দেখে মনে হয় শীতের সকালের রোদ। একটু উষ্ণ, একটু শান্ত।” সাবিহা চুপ করে গেল, তার গাল টুকটুকে লাল। “তুমি সবসময় এমন কবিতা লিখে কথা বলো?” সে লাজুকভাবে জিজ্ঞেস করলো। “না… শুধু তোমার জন্য।”
সেদিনের পর থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে আরেকটা অদ্ভুত টান তৈরি হলো।
শহরের বৃষ্টি ছিল তাদের প্রিয় সময়। এক বিকেলে সাবিহা আরিয়ানকে বললো, “চল না, আমরা ভিজে যাই।” “তুমি সত্যি? ছাতা আছে তো।” “ছাতা নামিয়ে ফেলো।”
দুজনেই ভিজলো। সাবিহার ভিজে চুল কপালে লেগে গেল, আরিয়ান তাকিয়েই থাকলো। “তুমি কি জানো, ভিজে গেলে তুমি আরও সুন্দর লাগো?” সাবিহা চোখ ঘুরিয়ে বললো, “চুপ করো।” কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি লুকানো গেল না।
সেই বৃষ্টির দিনে তারা প্রথম হাত ধরেছিল।
প্রেম মানে শুধু হাসি নয়, একটু অভিমানও থাকে।
একদিন সাবিহা রাগ করে বসে আছে। “তুমি সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে থাকো, আমার জন্য সময়ই দাও না।” আরিয়ান হাসতে হাসতে বললো, “তাহলে আমার ব্যাট-বল বিক্রি করে দিই?” “হ্যাঁ, দাও।” “ঠিক আছে, কিন্তু তার দামে আমি তোমাকে একটা আংটি কিনবো।”
সাবিহা লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে গেল। তার রাগ গলে গেল, শুধু ছোট্ট করে বললো, “পাগল।”
আরিয়ান সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি জানো, আমার জীবনে অনেক মানুষ এসেছে-গেছে। কিন্তু তোমার সঙ্গে থাকার পর মনে হয়, আমি খুঁজে পেয়েছি আমার ঘর।”
সাবিহার চোখ ভিজে উঠলো। “আমিও ভাবি, তুমি না থাকলে আমি এতটা হাসতে পারতাম না।”
তাদের নীরবতা হাজার কথার সমান।
প্রেম মানে কেবল সিনেমার মতো রঙিন মুহূর্ত নয়, বরং ছোট ছোট অভ্যাসও। আরিয়ান সাবিহাকে প্রতিদিন সকালে “গুড মর্নিং” মেসেজ পাঠাতো। সাবিহা আবার প্রতিদিন রাতে “কেয়ারফুলি স্লিপ” লিখে ঘুমাতে যেত।
এই ছোট ছোট কেয়ার, হাসি, অভিমান—সব মিলিয়ে তারা হয়ে উঠলো একে অপরের অপরিহার্য।
অনেক মাস পর, এক সন্ধ্যায় আরিয়ান সাবিহাকে বললো, “আজ একটা স্পেশাল কথা বলবো।”
সাবিহা অবাক হলো। আরিয়ান তার হাত ধরলো, চোখের দিকে তাকিয়ে ধীরে বললো— “সাবিহা, আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসি না। আমি চাই তুমি আমার সব সকাল, সব রাত, সব হাসি হয়ে থাকো। তুমি কি আমার সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চাও?”
সাবিহার চোখ ভিজে গেল। গলায় আটকে থাকা হাসি আর কান্না মিলিয়ে সে বললো— “হ্যাঁ, আরিয়ান। সবসময়।”
চারপাশে বাতাস বইছিল, আকাশে লালচে সন্ধ্যা। আর তাদের দুই হৃদয়ের ধ্বনি মিলে যাচ্ছিল এক সুরে।
Fairy Of Novel
ছোট গল্প- তুমি আমার নীলচে বিকেল
লেখিকা: মারজিয়া আক্তার (My Birthday Special)
সাবিহা ইসলাম আলভি, সবার কাছে “সাবিহা”, একেবারেই সাধারণ একটি মেয়ে। চশমা পরা, হাসলে গালে ছোট্ট টোল পড়ে যায়, আর কথায় অদ্ভুত এক মিষ্টি সুর। সে সবসময় লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ে। প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সে খুব একটা ভাবে না, বরং বই আর কফিই তার সব।
অন্যদিকে আরিয়ান হোসাইন রেহান, কলেজের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছেলে। লম্বা, স্মার্ট, ক্রিকেট খেলে দারুণ। কিন্তু জনপ্রিয়তার ভিড়েও তার চোখে সবসময় এক ধরনের শান্ত খোঁজ থাকে—যেন কাউকে খুঁজছে।
তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল একেবারে অদ্ভুতভাবে।
একদিন লাইব্রেরিতে সাবিহা একটা পুরনো বই খুঁজছিল। উপরের শেলফে বইটা রাখতে গিয়ে হঠাৎ করে হাত ফসকে বই পড়ে গেল।
ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর—
“সাবধান! আমি ধরছি।”
আরিয়ানই সেটা ধরেছিল।
তাদের চোখ হঠাৎ মিলল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুজনেই থমকে গেল।
“থ্যাঙ্ক ইউ…” সাবিহা আস্তে বললো।
“নো প্রবলেম। তুমি সবসময় এত বই নিয়ে থাকো?” আরিয়ান মৃদু হেসে বললো।
সাবিহা একটু লজ্জা পেয়ে বইটা বুকে জড়িয়ে ধরলো। “আমি বই ছাড়া থাকতে পারি না।”
সেদিন থেকেই শুরু হলো তাদের গল্প।
প্রথমে তারা শুধু হালকা কথায় সীমাবদ্ধ থাকলো। লাইব্রেরিতে দেখা হলে দুটো লাইন, ক্যাফেটেরিয়ায় হাই-হ্যালো। ধীরে ধীরে কথোপকথন লম্বা হতে লাগলো।
একদিন কফি শপে আরিয়ান হেসে বললো,
“জানো, তোমার হাসি দেখে মনে হয় শীতের সকালের রোদ। একটু উষ্ণ, একটু শান্ত।”
সাবিহা চুপ করে গেল, তার গাল টুকটুকে লাল।
“তুমি সবসময় এমন কবিতা লিখে কথা বলো?” সে লাজুকভাবে জিজ্ঞেস করলো।
“না… শুধু তোমার জন্য।”
সেদিনের পর থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে আরেকটা অদ্ভুত টান তৈরি হলো।
শহরের বৃষ্টি ছিল তাদের প্রিয় সময়।
এক বিকেলে সাবিহা আরিয়ানকে বললো, “চল না, আমরা ভিজে যাই।”
“তুমি সত্যি? ছাতা আছে তো।”
“ছাতা নামিয়ে ফেলো।”
দুজনেই ভিজলো। সাবিহার ভিজে চুল কপালে লেগে গেল, আরিয়ান তাকিয়েই থাকলো।
“তুমি কি জানো, ভিজে গেলে তুমি আরও সুন্দর লাগো?”
সাবিহা চোখ ঘুরিয়ে বললো, “চুপ করো।”
কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে লাজুক হাসি লুকানো গেল না।
সেই বৃষ্টির দিনে তারা প্রথম হাত ধরেছিল।
প্রেম মানে শুধু হাসি নয়, একটু অভিমানও থাকে।
একদিন সাবিহা রাগ করে বসে আছে।
“তুমি সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে থাকো, আমার জন্য সময়ই দাও না।”
আরিয়ান হাসতে হাসতে বললো, “তাহলে আমার ব্যাট-বল বিক্রি করে দিই?”
“হ্যাঁ, দাও।”
“ঠিক আছে, কিন্তু তার দামে আমি তোমাকে একটা আংটি কিনবো।”
সাবিহা লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে গেল।
তার রাগ গলে গেল, শুধু ছোট্ট করে বললো, “পাগল।”
একদিন বিকেলে নদীর ধারে বসে দুজন। বাতাস বইছে, চারপাশে শান্ত পরিবেশ।
আরিয়ান সাবিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি জানো, আমার জীবনে অনেক মানুষ এসেছে-গেছে। কিন্তু তোমার সঙ্গে থাকার পর মনে হয়, আমি খুঁজে পেয়েছি আমার ঘর।”
সাবিহার চোখ ভিজে উঠলো।
“আমিও ভাবি, তুমি না থাকলে আমি এতটা হাসতে পারতাম না।”
তাদের নীরবতা হাজার কথার সমান।
প্রেম মানে কেবল সিনেমার মতো রঙিন মুহূর্ত নয়, বরং ছোট ছোট অভ্যাসও।
আরিয়ান সাবিহাকে প্রতিদিন সকালে “গুড মর্নিং” মেসেজ পাঠাতো।
সাবিহা আবার প্রতিদিন রাতে “কেয়ারফুলি স্লিপ” লিখে ঘুমাতে যেত।
এই ছোট ছোট কেয়ার, হাসি, অভিমান—সব মিলিয়ে তারা হয়ে উঠলো একে অপরের অপরিহার্য।
অনেক মাস পর, এক সন্ধ্যায় আরিয়ান সাবিহাকে বললো,
“আজ একটা স্পেশাল কথা বলবো।”
সাবিহা অবাক হলো।
আরিয়ান তার হাত ধরলো, চোখের দিকে তাকিয়ে ধীরে বললো—
“সাবিহা, আমি তোমাকে শুধু ভালোবাসি না। আমি চাই তুমি আমার সব সকাল, সব রাত, সব হাসি হয়ে থাকো। তুমি কি আমার সঙ্গে সারাজীবন কাটাতে চাও?”
সাবিহার চোখ ভিজে গেল। গলায় আটকে থাকা হাসি আর কান্না মিলিয়ে সে বললো—
“হ্যাঁ, আরিয়ান। সবসময়।”
চারপাশে বাতাস বইছিল, আকাশে লালচে সন্ধ্যা।
আর তাদের দুই হৃদয়ের ধ্বনি মিলে যাচ্ছিল এক সুরে।
সমাপ্তি......
2 weeks ago (edited) | [YT] | 5