Aditi Mukherjee

উনি একা মারা গিয়েছিলেন — আর ৪২ বছর ধরে পৃথিবী ঠিকই চলতে থেকেছে, যেন কিছুই ঘটেনি।

১৯৬৬ সালে, ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব শহরের এক নার্স, হেডভিগা গোলিক, নিজের জন্য এক কাপ চা বানালেন এবং ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে বসে পড়লেন। কেউ জানে না এরপর ঠিক কী ঘটেছিল — শুধু এটুকু জানা যায়, তিনি আর কখনও উঠেননি।

বছরের পর বছর কেটে গেল। বাইরে পৃথিবী বদলে গেল — নতুন সরকার, নতুন যুদ্ধ, নতুন প্রজন্ম — কিন্তু সেই বন্ধ দরজার ওপারে সময় যেন থেমে গেল।

কেউ তার নিখোঁজ হওয়ার খবর দেয়নি। প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো অন্য কোথাও চলে গেছেন। ভবনের স্থপতি তার বিদ্যুৎ বিলের জন্য স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট সেট করেছিলেন — যা তার নিজের মৃত্যুর পরও চালু ছিল। তাই হেডভিগার ফ্ল্যাটে আলো জ্বলতে থাকল, বছর ধরে, দশক ধরে।

২০০৮ সালে, ভবনটিতে সংস্কার কাজ চলাকালীন, শ্রমিকরা অবশেষে সেই দরজাটি জোর করে খুললেন — আর ঢুকে পড়লেন এক সময়ের কফিনে।

ভিতরে সবকিছুই ১৯৬০-এর দশকের মতোই রয়ে গেছে। সাদাকালো টেলিভিশন। মধ্য-শতাব্দীর আসবাবপত্র। এক কাপ চা এখনো পড়ে আছে আরামচেয়ারের পাশে। আর সেই চেয়ারেই বসে আছেন হেডভিগা গোলিকের মমি করা দেহ — বন্ধ ঘর আর শুকনো বাতাসে নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত।

এই আবিষ্কার পুরো ক্রোয়েশিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছিল — শুধু দুঃখজনক ঘটনার জন্য নয়, বরং এ কারণে যে এটি আধুনিক জীবনের এক ভয়ঙ্কর সত্য উন্মোচন করেছিল: কেউ এতটাই হারিয়ে যেতে পারে, যে চার দশক ধরে কেউ টেরও পায় না।

পুলিশ তার কাগজপত্র ও ফটো দেখে পরিচয় নিশ্চিত করে। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল প্রায় ৪২ বছর — একজন নার্স, একজন বন্ধু, একসময় সমাজের অংশ ছিলেন, যাকে পৃথিবী একসময় ভুলে গিয়েছিল।

তার ফ্ল্যাট হয়ে উঠেছিল এক অদ্ভুত স্মৃতিস্তম্ভ — নিঃসঙ্গতার প্রতীক। সাংবাদিকরা একে বলেছিলেন “সময়ের সমাধি,” যেখানে একটি যুগ অক্ষত ছিল, আর একই সঙ্গে মানবজীবনের ভুলে যাওয়া বাস্তবতা প্রতিফলিত হচ্ছিল।

হেডভিগা গোলিকের গল্প শুধু মৃত্যুর নয় — এটি বিচ্ছিন্নতার গল্প।

তিনি শহরের কোলাহলের মাঝেই থাকতেন, অসংখ্য প্রতিবেশীর ঘেরা পরিবেশে — তবুও তিনি হারিয়ে গেলেন নিঃশব্দে।

৪২ বছর ধরে তার অ্যাপার্টমেন্টই ছিল তার সমাধি — আর তার আত্মা যেন ফিসফিস করে মনে করিয়ে দেয়, আধুনিক বিশ্বে নিঃসঙ্গতা কখনও কখনও মানুষকে পুরোপুরি অদৃশ্য করে দিতে পারে।

এক কাপ চা। একটি বন্ধ দরজা।
আর একটি জীবন, যার থেমে যাওয়া কেউ টেরই পায়নি।

#collected

6 days ago | [YT] | 6