বর্তমান বাংলাদেশে একধরণের কথা চালু হইছে যে ব্যাপক আকারে অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে গণহারে কোনো নজরদারি চলমান থাকা সম্ভব না। আসুন কারণগুলো দেখি:
১. এনক্রিপশন: আপনার মেসেঞ্জারের আর হোয়াটসএপের ডাটা হচ্ছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড। এনক্রিপশন হচ্ছে অনেকটা এমন যে আপনি আপনার বন্ধুর কাছে সিন্দুক পাঠাচ্ছেন। সিন্দুকের চাবি শুধু আপনার এবং আপনার বন্ধুর কাছেই আছে। অন্য কেউই এইটা খুলতে পারবে না। মেসেঞ্জারেও জিনিসটা একই ভাবে কাজ করে। আপনার সাথে আপনার বন্ধুর মেসেজ শুধু আপনারা দুইজনই দেখতে পারবেন। ফেসবুকও চাইলে দেখতে পারবে না এটা। এর উপর দিয়ে ভিপিএন ব্যবহার করলে আরো নিরাপদ।
২. ডাটার বিশাল পরিমাণ: বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায় ০৫ কোটি। এখন কল্পনা করুন কি বিশাল পরিমাণ ডাটা আমরা প্রতি সেকেন্ডে জেনারেট করছি। এই বিশাল পরিমাণ Raw ইন্টারনেট ট্রাফিক ক্যাপচার করা, এবজর্ব করা, স্টোর করা এবং এনালাইসিস করা এবং আগের ডাটার সাথে প্যাটার্ন ম্যাচ করা অনেক বড় একটা বিষয়। এইগুলো করতে বিশাল পরিমাণ কম্পিউটিং পাওয়ার বা টাকা লাগে। আপনার কাছে এইটা সত্যি লাগলে, খেয়াল করবেন, আপনি আসলে সেই সরকার যারা কিনা একটা ঠিকমতো টিকেট কেনার প্ল্যাটফর্ম বানাতে পারে নাই, যাদের এনআইডি ছাপাইতে কখনো পাঁচ বছর পর্যন্ত লেগে যায়, তাদেরকে একটু বেশি ক্রেডিট দিয়ে ফেলতেছেন। এই সরকার একবার অলমোস্ট ২ বিলিয়ন ডলার, মানে দুইশ কোটি ডলার (টাকা না কিন্তু!) হারায়ে ফেলছিলো হ্যাকের শিকার হয়ে (আপনাদের জ্ঞাতার্থেঃ এই সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট আবার হ্যাক হইছে)।
এখন দেখা যাক আপনার তথ্য কিভাবে সরকার এক্সেস করতে পারে -
১. তথ্য চাওয়া: সরকার ফেসবুকের কাছ থেকে আপনার তথ্য চাইতে পারে। কিন্তু এভাবে তথ্য পাওয়ার জন্য বাপজানদের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এবং সেইক্ষেত্রেও প্রথমে আপনার বিরুদ্ধে লিগাল ওয়ারেন্ট জারি করতে হবে, যেইটা আবার ফেসবুক রিভিউ করবে। এরপরেও ফেসবুক শুধু তাদেরকে মেটাডাটা দিবে- কখন মেসেজ পাঠানো হয়েছে, মেসেজের সাইজ, কে পাঠাইছে, কে রিসিভ করছে এইগুলা। কিন্তু কখনোই মেসেজের কনটেন্ট বা আপনার একচুয়াল মেসেজ আসলে কি এইটা দেখাবে না। এরপরে চিন্তা করেন, বাংলাদেশে ফেসবুক এখন পর্যন্ত কোনো অফিস খুলতে চায় না, সিম্পলি বিকজ, বাংলাদেশের মার্কেট তাদের জন্য প্রফিটেবল না তেমন। প্রফিট আসে মূলত এড থেকে, আমাদের দেশে ফেসবুক এডের মার্কেটটা ওইভাবে এখনো দাঁড়ায় নাই।
২. আড়িপাতা প্রযুক্তি: আপনাকে Pegasus প্রযুক্তি দিয়ে টার্গেট করা হইতে পারে। যেই ৪৫টা দেশ ইজরায়েলের কাছে থেকে এই প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটা দেশ। এই আড়িপাতা প্রযুক্তি আপনার ডিভাইসে যেকোনোভাবে ইন্সটল হয়ে যেতে পারে- টেক্সট মেসেজ, ছবি, যেকোনো কিছুই। আপনাকে কোনো ক্লিকও করতে হবে না। এরপরে এই প্রযুক্তি আপনার ফোনের ডাটা চুরি করতে পারে বা আপনার ডিভাইসের ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে পারে, আপনি জানবেনও না। এইটা আসলেও দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এইখানে একটা ঝামেলা আছে- ঝামেলাটা হচ্ছে এক একটা ব্যক্তিকে টার্গেট করতেই ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। সো আপনি যদি একদম কি ফিগার মানে মধ্যমণি না হন (যেমন বিরোধী দলের নেতা বা এমন কিছু), আপনাকে মনিটরিং তারা করবে না।
৩. ফিজিকাল এবং ব্যাংকের বিপদ: এইটা খুবই সম্ভব। আপনার বাসায় গোয়েন্দা পাঠানো, এলাকায় আপনাকে ফলো করা, আপনার সাথে কার কার দেখা হয় তার নথি রাখা। আপনার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, আপনার কল স্টেটমেন্ট, ব্যাংক আর সিম কোম্পানির কাছ থেকে জোগাড় করা। এগুলি নিয়া খুব অল্পতেই তারা আপনাকে বিভ্রান্তও করতে পারে। যেমন আপনার ব্যাংকের স্টেটমেন্টে দেখা গেলো আপনি রেগুলার পশু ডাক্তারের কাছে যান, গত সপ্তাহে বিল বেশি আসছে, আর কুকুরের খাবার কেনেন। আপনারে ফোন দিয়া বলবে, কি, বাইডেন সাহেব, কুকুরটা অসুস্থ নাকি? এই কাজ আমাদের এক বড় ভাই ক্যাম্পাসে থাকার সময় করতেন, পুলিশ আটকাইলেই বলতেন, এমন কেনো করেন কুদ্দুস ভাই। কুদ্দুস ভাই তো কিছুক্ষণের জন্য বোকা, তার নেইম ট্যাগে যে তার নাম লেখা, এইটাই তার হিসাবে নাই। এইসব ব্যাংক, ফোন, ও ফিজিকাল পিছু নেয়ার বিপদের সাথে আপনার অনলাইন পদচারণার কোনো সম্বন্ধ নাই। তবে, এইসব কারণে, ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারের চেয়ে এটিএম থেকে একসাথে টাকা তুলে ব্যবহার সব দেশেই আপনাকে পুলিশের হাত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়।
আর হ্যাঁ, রাস্তায় ফোন চেক হইতে পারে, এই বিবেচনায় আপনার ফোনে হাইড এপস/সেকেন্ড স্পেস/প্রাইভেট স্পেস নামে একটা অপশন থাকার কথা, সেটিংসে, ঐটা ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের মনে এই ভয় বসায়ে দেওয়া হইছে যে সবকিছু মনিটর করা হচ্ছে, যেন আমি আপনি এই ভয় থেকেই কিছু না করি। আমরা মুক্ত ভাবে কথা বলতে পারি, লিখতে পারি। ওরা তো নিরস্ত্র মানুষকেও গুলি করে, আর শব্দের চেয়ে, ভাষার চেয়ে বড় অস্ত্র আমাদের আর কি আছে রে ভাই!
Computer Vai
(পারলে কপি করে শেয়ার করেন)
বর্তমান বাংলাদেশে একধরণের কথা চালু হইছে যে ব্যাপক আকারে অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে গণহারে কোনো নজরদারি চলমান থাকা সম্ভব না। আসুন কারণগুলো দেখি:
১. এনক্রিপশন: আপনার মেসেঞ্জারের আর হোয়াটসএপের ডাটা হচ্ছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড। এনক্রিপশন হচ্ছে অনেকটা এমন যে আপনি আপনার বন্ধুর কাছে সিন্দুক পাঠাচ্ছেন। সিন্দুকের চাবি শুধু আপনার এবং আপনার বন্ধুর কাছেই আছে। অন্য কেউই এইটা খুলতে পারবে না। মেসেঞ্জারেও জিনিসটা একই ভাবে কাজ করে। আপনার সাথে আপনার বন্ধুর মেসেজ শুধু আপনারা দুইজনই দেখতে পারবেন। ফেসবুকও চাইলে দেখতে পারবে না এটা। এর উপর দিয়ে ভিপিএন ব্যবহার করলে আরো নিরাপদ।
২. ডাটার বিশাল পরিমাণ: বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায় ০৫ কোটি। এখন কল্পনা করুন কি বিশাল পরিমাণ ডাটা আমরা প্রতি সেকেন্ডে জেনারেট করছি। এই বিশাল পরিমাণ Raw ইন্টারনেট ট্রাফিক ক্যাপচার করা, এবজর্ব করা, স্টোর করা এবং এনালাইসিস করা এবং আগের ডাটার সাথে প্যাটার্ন ম্যাচ করা অনেক বড় একটা বিষয়। এইগুলো করতে বিশাল পরিমাণ কম্পিউটিং পাওয়ার বা টাকা লাগে। আপনার কাছে এইটা সত্যি লাগলে, খেয়াল করবেন, আপনি আসলে সেই সরকার যারা কিনা একটা ঠিকমতো টিকেট কেনার প্ল্যাটফর্ম বানাতে পারে নাই, যাদের এনআইডি ছাপাইতে কখনো পাঁচ বছর পর্যন্ত লেগে যায়, তাদেরকে একটু বেশি ক্রেডিট দিয়ে ফেলতেছেন। এই সরকার একবার অলমোস্ট ২ বিলিয়ন ডলার, মানে দুইশ কোটি ডলার (টাকা না কিন্তু!) হারায়ে ফেলছিলো হ্যাকের শিকার হয়ে (আপনাদের জ্ঞাতার্থেঃ এই সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট আবার হ্যাক হইছে)।
এখন দেখা যাক আপনার তথ্য কিভাবে সরকার এক্সেস করতে পারে -
১. তথ্য চাওয়া: সরকার ফেসবুকের কাছ থেকে আপনার তথ্য চাইতে পারে। কিন্তু এভাবে তথ্য পাওয়ার জন্য বাপজানদের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এবং সেইক্ষেত্রেও প্রথমে আপনার বিরুদ্ধে লিগাল ওয়ারেন্ট জারি করতে হবে, যেইটা আবার ফেসবুক রিভিউ করবে। এরপরেও ফেসবুক শুধু তাদেরকে মেটাডাটা দিবে- কখন মেসেজ পাঠানো হয়েছে, মেসেজের সাইজ, কে পাঠাইছে, কে রিসিভ করছে এইগুলা। কিন্তু কখনোই মেসেজের কনটেন্ট বা আপনার একচুয়াল মেসেজ আসলে কি এইটা দেখাবে না। এরপরে চিন্তা করেন, বাংলাদেশে ফেসবুক এখন পর্যন্ত কোনো অফিস খুলতে চায় না, সিম্পলি বিকজ, বাংলাদেশের মার্কেট তাদের জন্য প্রফিটেবল না তেমন। প্রফিট আসে মূলত এড থেকে, আমাদের দেশে ফেসবুক এডের মার্কেটটা ওইভাবে এখনো দাঁড়ায় নাই।
২. আড়িপাতা প্রযুক্তি: আপনাকে Pegasus প্রযুক্তি দিয়ে টার্গেট করা হইতে পারে। যেই ৪৫টা দেশ ইজরায়েলের কাছে থেকে এই প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটা দেশ। এই আড়িপাতা প্রযুক্তি আপনার ডিভাইসে যেকোনোভাবে ইন্সটল হয়ে যেতে পারে- টেক্সট মেসেজ, ছবি, যেকোনো কিছুই। আপনাকে কোনো ক্লিকও করতে হবে না। এরপরে এই প্রযুক্তি আপনার ফোনের ডাটা চুরি করতে পারে বা আপনার ডিভাইসের ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে পারে, আপনি জানবেনও না। এইটা আসলেও দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এইখানে একটা ঝামেলা আছে- ঝামেলাটা হচ্ছে এক একটা ব্যক্তিকে টার্গেট করতেই ২৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। সো আপনি যদি একদম কি ফিগার মানে মধ্যমণি না হন (যেমন বিরোধী দলের নেতা বা এমন কিছু), আপনাকে মনিটরিং তারা করবে না।
৩. ফিজিকাল এবং ব্যাংকের বিপদ: এইটা খুবই সম্ভব। আপনার বাসায় গোয়েন্দা পাঠানো, এলাকায় আপনাকে ফলো করা, আপনার সাথে কার কার দেখা হয় তার নথি রাখা। আপনার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট, আপনার কল স্টেটমেন্ট, ব্যাংক আর সিম কোম্পানির কাছ থেকে জোগাড় করা। এগুলি নিয়া খুব অল্পতেই তারা আপনাকে বিভ্রান্তও করতে পারে। যেমন আপনার ব্যাংকের স্টেটমেন্টে দেখা গেলো আপনি রেগুলার পশু ডাক্তারের কাছে যান, গত সপ্তাহে বিল বেশি আসছে, আর কুকুরের খাবার কেনেন। আপনারে ফোন দিয়া বলবে, কি, বাইডেন সাহেব, কুকুরটা অসুস্থ নাকি? এই কাজ আমাদের এক বড় ভাই ক্যাম্পাসে থাকার সময় করতেন, পুলিশ আটকাইলেই বলতেন, এমন কেনো করেন কুদ্দুস ভাই। কুদ্দুস ভাই তো কিছুক্ষণের জন্য বোকা, তার নেইম ট্যাগে যে তার নাম লেখা, এইটাই তার হিসাবে নাই। এইসব ব্যাংক, ফোন, ও ফিজিকাল পিছু নেয়ার বিপদের সাথে আপনার অনলাইন পদচারণার কোনো সম্বন্ধ নাই। তবে, এইসব কারণে, ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারের চেয়ে এটিএম থেকে একসাথে টাকা তুলে ব্যবহার সব দেশেই আপনাকে পুলিশের হাত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়।
আর হ্যাঁ, রাস্তায় ফোন চেক হইতে পারে, এই বিবেচনায় আপনার ফোনে হাইড এপস/সেকেন্ড স্পেস/প্রাইভেট স্পেস নামে একটা অপশন থাকার কথা, সেটিংসে, ঐটা ব্যবহার করতে পারেন।
আমাদের মনে এই ভয় বসায়ে দেওয়া হইছে যে সবকিছু মনিটর করা হচ্ছে, যেন আমি আপনি এই ভয় থেকেই কিছু না করি। আমরা মুক্ত ভাবে কথা বলতে পারি, লিখতে পারি। ওরা তো নিরস্ত্র মানুষকেও গুলি করে, আর শব্দের চেয়ে, ভাষার চেয়ে বড় অস্ত্র আমাদের আর কি আছে রে ভাই!
(অনূদিত ও সংগৃহিত)
8 months ago | [YT] | 0