ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৯টা ৫২। কলেজ অডিটোরিয়ামের স্টেজে হালকা আলো পড়ে আছে। সাউন্ড চেক চলছে, লাইটিং এর লোকেরা ক্যাবল গোছাচ্ছে। এক কোণে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে, হাতজোড়া শক্ত করে চেপে রাখা, যেন কিছু ভয় আটকে রাখতে চাইছে।
কিন্তু সকাল থেকেই মনটা ছটফট করছে। রিয়ার আচরণটা গতকাল থেকে অস্বস্তিকর। বারবার রায়হানের পাশে এসে দাঁড়ানো, তার পুরোনো স্মৃতির কথা তোলা—সবকিছু মিলিয়ে আয়াতের ভিতরটা কেমন চুপসে গেছে।
ঠিক ১০টা বাজতেই রায়হান এসে হাজির। আজ তার পরনে সাদা শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার—তবে চুলটা একটু এলোমেলো। হাতে পানির বোতল, মুখে হালকা ক্লান্তি।
একটা সময় আসে, যখন আয়াতের মুখ রায়হানের খুব কাছে চলে আসে। তার শ্বাস ভারি হয়ে আসে। চোখে চোখ পড়ে যায়।
রায়হান আস্তে বলল, — “তুই জানিস তো, তোকে ছাড়া এই গানের কোনো মানে হয় না আমার কাছে।” আয়াত কিছু বলে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
স্টেপ বদলায়, এবার আয়াতকে ধরে একটু উঁচুতে তোলার পালা। রায়হান তার কোমরের নিচে হাত রাখে, আয়াতের চোখে ভয়ের ছায়া।
— “Don’t worry, আমি আছি। কখনও ফেলবো না তোকে।”
রিহার্সাল শেষ হয়। সবাই তালি দেয়। কেউ কেউ বলে, “তোমাদের কেমিস্ট্রি অসাধারণ!” রিয়ার চোখে তখন স্পষ্ট একটা রাগ আর চাপা ঈর্ষা।
বাইরে এসে আয়াত একা বসে থাকে ক্যাম্পাসের এক কোণে।
রিয়া আসে তার পাশে বসে।
— “তুমি কি জানো রায়হান আমাকে একসময় খুব ভালো বন্ধু ভাবত? প্রায় প্রতিদিন কথা হতো...” — “হয়তো এখনো ভাবে” – আয়াত ঠান্ডা গলায় বলল — “তবে এখন তো তার জীবনে কেউ আছে...” — “হ্যাঁ, কেউ আছে। কিন্তু সেই ‘কেউ’ এখনো কিছুই বলেনি।”
— “কিছু বলবি?” — “তুই আর রিয়া কি একসময় খুব কাছের ছিলি?” রায়হান অবাক হয়। তারপর একদম সরল গলায় বলে, — “তুই তো জানিস, আমরা বন্ধু ছিলাম। কিন্তু ওর ধারণা ছিল আমি হয়তো বেশি কিছু ভাবি... আমি তো তোকে ছাড়া কোনোদিন কাউকে অনুভব করিনি।” — “আমি তো তোকে কিছু বলি না কখনো...” — “এই তো তোর সমস্যা। তুই চুপ থাকিস। আর আমি তোর চুপ থাকাটা পড়ে নিতে থাকি।”
এক মুহূর্তের নীরবতা। আয়াত বলল, — “তুমি কি চাও আমি কিছু বলি?” রায়হান হেসে বলল, — “না, আমি চাই তুই শুধু থাক। কথা বলিস না, কিন্তু আমার পাশে থাকিস। কারণ তুই না থাকলে আমার ছায়াও অসম্পূর্ণ মনে হয়।”
Fairy Of Novel
প্রণয়ের কথা– পর্ব ৪!
লেখিকা: মারজিয়া আক্তার
ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৯টা ৫২।
কলেজ অডিটোরিয়ামের স্টেজে হালকা আলো পড়ে আছে। সাউন্ড চেক চলছে, লাইটিং এর লোকেরা ক্যাবল গোছাচ্ছে। এক কোণে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে, হাতজোড়া শক্ত করে চেপে রাখা, যেন কিছু ভয় আটকে রাখতে চাইছে।
আজ রিহার্সাল। আয়াত আর রায়হান প্রথমবারের মতো একসাথে কাপল ডান্স করবে, গানে—
“সজনী তোমার দেখিয়া মাতাল হইয়া রাতের ঘুম গেল উড়িয়া...”
কিন্তু সকাল থেকেই মনটা ছটফট করছে।
রিয়ার আচরণটা গতকাল থেকে অস্বস্তিকর। বারবার রায়হানের পাশে এসে দাঁড়ানো, তার পুরোনো স্মৃতির কথা তোলা—সবকিছু মিলিয়ে আয়াতের ভিতরটা কেমন চুপসে গেছে।
ঠিক ১০টা বাজতেই রায়হান এসে হাজির। আজ তার পরনে সাদা শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার—তবে চুলটা একটু এলোমেলো। হাতে পানির বোতল, মুখে হালকা ক্লান্তি।
— “সরি আয়াত, একটু লেট হয়ে গেল”
— “কোনো ব্যাপার না” – গলা নিচু, চোখ সরিয়ে রাখা
রায়হান কিছুটা বুঝে নেয়।
সে পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
— “তুই ঠিক আছিস?”
— “হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। শুরু করব?”
— “চল”
সাউন্ড অন হয়।
গানের বিট আস্তে আস্তে শুরু হয়—
“সজনী তোমার দেখিয়া…”
রায়হান আয়াতের হাতটা বাড়িয়ে নেয়, হালকা ছুঁয়ে।
তারপর ডান্সের স্টেপ অনুযায়ী একটু ঘুরিয়ে নেয়।
একটা সময় আসে, যখন আয়াতের মুখ রায়হানের খুব কাছে চলে আসে।
তার শ্বাস ভারি হয়ে আসে। চোখে চোখ পড়ে যায়।
রায়হান আস্তে বলল,
— “তুই জানিস তো, তোকে ছাড়া এই গানের কোনো মানে হয় না আমার কাছে।”
আয়াত কিছু বলে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।
স্টেপ বদলায়, এবার আয়াতকে ধরে একটু উঁচুতে তোলার পালা।
রায়হান তার কোমরের নিচে হাত রাখে, আয়াতের চোখে ভয়ের ছায়া।
— “Don’t worry, আমি আছি। কখনও ফেলবো না তোকে।”
রিহার্সাল শেষ হয়। সবাই তালি দেয়।
কেউ কেউ বলে, “তোমাদের কেমিস্ট্রি অসাধারণ!”
রিয়ার চোখে তখন স্পষ্ট একটা রাগ আর চাপা ঈর্ষা।
বাইরে এসে আয়াত একা বসে থাকে ক্যাম্পাসের এক কোণে।
রিয়া আসে তার পাশে বসে।
— “তুমি কি জানো রায়হান আমাকে একসময় খুব ভালো বন্ধু ভাবত? প্রায় প্রতিদিন কথা হতো...”
— “হয়তো এখনো ভাবে” – আয়াত ঠান্ডা গলায় বলল
— “তবে এখন তো তার জীবনে কেউ আছে...”
— “হ্যাঁ, কেউ আছে। কিন্তু সেই ‘কেউ’ এখনো কিছুই বলেনি।”
রিয়ার মুখ থমকে যায়। আয়াত উঠে দাঁড়িয়ে চলে যায়।
ওদিকে রায়হান অপেক্ষা করছে ফেস্ট রুমে।
আয়াত ঢোকে। মুখে চাপা রাগ।
— “কিছু বলবি?”
— “তুই আর রিয়া কি একসময় খুব কাছের ছিলি?”
রায়হান অবাক হয়। তারপর একদম সরল গলায় বলে,
— “তুই তো জানিস, আমরা বন্ধু ছিলাম। কিন্তু ওর ধারণা ছিল আমি হয়তো বেশি কিছু ভাবি... আমি তো তোকে ছাড়া কোনোদিন কাউকে অনুভব করিনি।”
— “আমি তো তোকে কিছু বলি না কখনো...”
— “এই তো তোর সমস্যা। তুই চুপ থাকিস। আর আমি তোর চুপ থাকাটা পড়ে নিতে থাকি।”
এক মুহূর্তের নীরবতা।
আয়াত বলল,
— “তুমি কি চাও আমি কিছু বলি?”
রায়হান হেসে বলল,
— “না, আমি চাই তুই শুধু থাক। কথা বলিস না, কিন্তু আমার পাশে থাকিস। কারণ তুই না থাকলে আমার ছায়াও অসম্পূর্ণ মনে হয়।”
আয়াত চোখ নামিয়ে ফেলে। মুখে হালকা কষ্ট লুকানো হাসি।
ফেস্টের আগের শেষ রিহার্সাল শেষ হয়।
রিয়ার উপস্থিতি আর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।
রায়হান স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়—আয়াতের জায়গা কেউ নিতে পারবে না।
আর আয়াত?
সে মনে মনে ভাবছিল—
“আমরা এখনো কেবল বন্ধু।
তবুও, এই বন্ধুত্বের ছায়াতেই আমি নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করি।
যদি কখনো বলা হয় ভালোবাসা...
আমি শুধু তোমাকেই বলব।”
চলবে...
1 month ago | [YT] | 2