উপন্যাস কথা

#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#সালমা_চৌধুরী
(সারপ্রাইজ পর্ব 2 এর 3rd part)
মেঘ এখনও অগ্নিদৃষ্টিতে তানভীরকে দেখছে। মেঘের হাবভাব দেখে বন্যা মেঘকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। সামান্য বিষয় নিয়ে মেঘ আবিরের সাথে রাগারাগি করেছে এটা ভেবেই বন্যার হাসি পাচ্ছে। সকালে কফির বিষয় নিয়ে রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়েছে সে রাগ কমতে না কমতেই আরেক বিষয়। হাসিতে বন্যার পেট ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ্যে হাসতে পারছে না। তানভীর মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

" এভাবে কি দেখছিস?"

"তুমি আমার নামে এসব বলেছো ওনাকে?"

"না না, আমি কিছু বলি নি। আমার বোন কত ভালো! আমি কি জানি না? শুধু রাগটা একটু বেশি। আর কোনো সমস্যা নেই। রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না, এইতো।"

মেঘ রাগে কটমট করতে করতে বলল,
" ঘরের শত্রু বিভীষণ।"

বন্যা মেঘকে থামাতে ধীর গলায় বলল,
" কি সব বলছিস! সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ এত রাগ করে?"

"তুই ওঁদের চিনিস না৷ আমি ওঁদের হাড়ে হাড়ে চিনি৷ পুরুষ জাত মানেই খারাপ। তাদের মনে এক, বাইরে আরেক৷ দেখাবে খুব ভালো মানুষ। আদোতে কিছুই না।"

আবির আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
" আমিও কি তেমন?"

মেঘ ঘনঘন উপরনিচ মাথা নাড়ল। তানভীর আবিরকে সান্ত্বনা দিতে বলল,
" থাক ভাইয়া, মন খারাপ করো না। ছেলে মানুষ ঝামেলা মানে পুরো পৃথিবীর সব পুরুষই খারাপ। তুমি একা ভালো হওয়ার সুযোগ নেই। যেই তুমি মালাকে মিস করো সে তো আরও বেশি খারাপ।"

ওঁদের কথোপকথন শুনে বন্যা নিঃশব্দে হাসছে। কি এক বিষয় নিয়ে মেঘ, আবির, তানভীর সিরিয়াসভাবে ঝগড়া করছে। হাসিও পাচ্ছে আবার লজ্জাও লাগছে। আশেপাশের মানুষজন কেমন করে তাকিয়ে আছে। তানভীর বন্যার দিকে এক নজর দেখল। মেঘকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে বলল,

" ভাগ্যিস! আমার বউটা ম্যাচিউর। এ দিক থেকে আমি নিশ্চিন্ত। "

আবির আড়চোখে মেঘকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। মেঘ যে রাগে আগুন হচ্ছে সেটা বুঝার বাকি নেই। মেঘ চোখ লাল করে
তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তানভীর মেঘকে ভেঙাচ্ছে। এতে মেঘের রাগ আরও বাড়ছে। বন্যা দু'হাতে মুখ চেপে হেসেই যাচ্ছে। কয়েক মুহুর্ত নিশ্চুপ থেকে মেঘের গর্জনের মতো হঠাৎ বলে ওঠল,

" ছিঃ ভাইয়া৷ তুমি এখনও তোমার এক্সকে মিস করো?"

তানভীর চমকে ওঠল। সেই সাথে বন্যাও। তানভীর বলল,
" মানে?"

" সরি ভাইয়া, অতীত ভুলতে না পারলে তোমার কাছে আমার বান্ধবীকে দিতে পারছি না। আমি আগেই বলেছিলাম পুরুষ জাতই খারাপ। দেখলি বন্যা, সেই দলে আমার ভাইও আছে।"

বন্যার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেছে। মেঘের কথা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। তানভীর, আবির দুজনেই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে৷ তানভীর প্রশ্ন করল,

" আমি কি করলাম?"

" তুমি করো নি তোমার অতীত করেছে। কি যেন নাম! আয়েশা না?"

বন্যার মুখ ভার হয়ে আছে। হাসির ছিটেফোঁটাও নেই মুখে। তানভীর বক্রদৃষ্টিতে বন্যাকে একবার দেখল। মেয়েটা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।তানভীর ভ্রু কুঁচকে বলল,

" অতীত থাকাটা কি দোষের? হঠাৎ সেই নাম কেনো উঠছে ?

"কারো অতীত থাকাটা দোষের নয়। তবে অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে, তাঁর নামের প্রথম অক্ষরের টি-শার্ট পড়ে ঘুরঘুর করাটা দোষের। আর এই দোষ ক্ষমার অযোগ্য। "

তানভীর চমকে উঠে নিজের পড়নের টিশার্ট দিকে তাকাল। ডিজাইনিং টিশার্টের মাঝখানে A লেখা। স্পষ্ট তাকালে বুঝা যায় না। তবে কেউ সূক্ষ্ম নজরে চাইলে ঠিকই বুঝবে। মেঘ বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে অক্ষরটা খুঁজে পেয়েছে। বন্যা, আবির, তানভীর তিনজনের নজরই টিশার্টে। আবির শান্ত কণ্ঠে বলল,

" বউ, আমার সম্বন্ধি তোমার মতো এত বিচক্ষণ না। টিশার্টের ডিজাইনের ভেতর A লেখা নাকি S লেখা সেসব দেখার সময় আছে নাকি তার!"

" সময় না থাকলে এক কালার টিশার্ট পড়বে। দরকার হয় সাদা পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরবে তাই বলে A লেখা টিশার্টই কেনো? B লেখা টিশার্ট বাজারে ছিল না? আপনি আবার ভাইয়ার হয়ে সাফাই গাইতেছেন।"

" কি মেয়ে রে বাবা!"

তানভীর বন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,
" তোমার ননদকে একটু বুঝাও।"

এতক্ষণ বন্যার মুখে হাসি থাকলেও এবার সে নির্বাক। মেঘকে বুঝানোর চেষ্টাও করল না। ছোটখাটো বিষয়ে মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি কষ্ট পায়। এতক্ষণ মেঘের কথাগুলো ফাজলামো মনে হলেও এবার না চাইতেও বন্যা সিরিয়াস হয়ে গিয়েছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। বুঝাতে চাচ্ছে সে একদম ঠিক আছে। কিন্তু চোখে মুখে ফুটে উঠছে সে ঠিক নেই। মিনিট দশেক চলল তানভীর আর মেঘের ঝগড়া। মাঝখানে মাঝখানে আবির দুয়েকটা কথা বলে সেটাতেও হাজারটা দোষ ধরছে মেঘ। সকালের রাগটা এখনও পুরোপুরি কমে নি। দশ মিনিট যাবৎ বন্যা নিশ্চুপ বসে আছে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মেঘ বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বন্যার হাত ধরে বলল,

" চল আমার সাথে। ওঁদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। পুরুষ জাতই খারাপ। একজন মালাকে ছাড়া বাঁচবে না আরেকজন আয়েশাকে ছাড়া। শুধু শুধু তোর আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।"

আবির বসা থেকে উঠে বলল,
" এই দাঁড়াও, আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিব।"

তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার বলল,
" এই তানভীর, ওঁকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আয়।"

মেঘ গর্জে ওঠে বলল,
" কোনো দরকার নেই। আমরা বাসা চিনি৷ একায় যেতে পারব।"

আবির গম্ভীর কণ্ঠে ডাকল,
" মেঘ।"

মেঘ রাগে কটমট করে বলল,
" খান বাড়িতে আপনাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আমি এক্ষুনি বাসায় গিয়ে আব্বু, বড়ো আব্বুকে সব বলব। বাসার আশেপাশেও যেন আপনাদের না দেখি।"

মেঘ বন্যাকে টানতে টানতে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠে বসল। তানভীর হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। মেঘের রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না৷ তাই বলে বন্যাও! বন্যা মুখ ফুলিয়ে চলে গেল৷ ওর কি উচিত ছিল না তানভীরের সাথে যাওয়া?



রাত ৯ টার উপরে বাজে। তানভীর বন্যাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বন্যাকে একের পর পর এক কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না৷ নতুন জামাই অসময়ে বাসায় যেতেও লজ্জা লাগছে। অনেকগুলো কল দেওয়ার পর অবশেষে কল রিসিভ করেছে।

" বলুন।"

"কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কতগুলো কল দিয়েছি তোমাকে।"

" আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দেখি নি।"

" আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে না। তুমি নিচে আসো তো। দেখি একটু!"

বন্যা চমকে ওঠে জিজ্ঞেস করল,
" আপনি কোথায় এখন?"

" অফিস থেকে কল দিতে দিতে এখন তোমাদের বাসার নিচে আছি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো ব্যথা হয়ে গেছে। আসো, প্লিজ।"

বন্যা কিছু বলার সাহস পেল না। বেড়িয়ে এলো বাসা থেকে। রাত গভীর। পরিবেশ একদম শান্ত৷ তানভীরের পড়নে এখন কালো রঙের টিশার্ট। যার মাঝখানে সাদা রঙে বড় করে লেখা ' B' বন্যা টিশার্টের দিকে একবার দেখল কিন্তু তানভীরকে কিছু বুঝতে দিল না।বলল,

" এত রাতে আপনি এখানে?"

"নিজের বিয়ে করা বউকে দেখতে আবার সময় লাগে নাকি? ইচ্ছে হয়েছে এসেছি। বাসায় নিতে পারছি না বলে কি বউকে দেখতেও আসতে পারব না?"

"আমি সেটা বলি নি।"

" তখন রাগ করে চলে এলে কেনো?"

বন্যা মলিন হেসে বলল,
" রাগ করিনি।"

"তা তোমার চোখ- মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। বনু রাগের মাথায় কি কি বলল তুমিও ওর সঙ্গে সিরিয়াস হয়ে গেলে। এটা কি হলো?"

বন্যা উত্তর দিচ্ছে না।৷ তানভীর আবারও বলল,
" বনু বাসায় গিয়ে কি বলেছে জানো?"

" কি?"

"বলেছে, আমি নাকি তোমার সাথে সিরিয়াস ঝগড়া করেছি। বনুকেও বকা দিয়েছি। আরও কি কি বলেছে কে জানে। আব্বু আমাকে কল দিচ্ছে ইচ্ছে মতো বকা দিয়েছে। ওর জন্য সকালে একবার ধমক খেলাম৷ একটু আগে আবার। বাসায় যাওয়ার পর নিশ্চয়ই আবার খাবো। কিন্তু বনু.. সে তো দিব্যি আছে।"

বন্যা চাপা স্বরে বলল,
" অনেক রাত হয়েছে বাসায় যান। "

"যাব৷ তার আগে A লেখা টিশার্ট টা পুড়িয়ে তোমার মনের ভেতরের ক্ষোভ, অভিমান, কষ্টগুলো দূর করে নেই।"

"কিছু পুড়াতে হবে না।"

"পুড়াবো তো অবশ্যই। দেখো ব্যাগে করে টিশার্ট নিয়ে এসেছি।"

হঠাৎ রাস্তার পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন,
" আগেই বলেছিলাম, এই ছেলেকে বিয়ে করো না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। আমার কথা মানলে না। আজ যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হতে তাহলে আমার মনে জায়গা পেতে৷ চায়ের দোকান তোমার নামে করে দিতাম। "

তানভীর বন্যা দু'জনেই সেদিকে তাকালো। মোখলেস মিয়া এক বালতি পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তানভীর রাগে ফোঁস করে ওঠল৷ বন্যা তৎক্ষনাৎ তানভীরের হাত চেপে ধরে বলল,
" রাগ দেখাবেন না, প্লিজ।"

মোখলেস মিয়া আবার বললেন,
" আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি৷ আমার মনের দরজা তোমার জন্য এখনও খুলা।"

তানভীর রাগান্বিত কণ্ঠে বলল,
" আমি কি দাদিকে খবর দিব? আমার বউয়ের দিকে কুনজর দিলে আপনার সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দিব। ফায়ার সার্ভিসের ৩ টিম এসেও সে আগুন নেভাতে পারবে না। এই আমি বলে রাখলাম।"

মোখলেস মিয়া হাসতে হাসতে বলছেন,
" দাদিরে আর কওন লাগতো না। আমি যাইতাছি। চা খাইয়া যাইয়ো।"

বন্যা তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল,
" এত ভালোবাসেন আমাকে?"

"জি।"

"তবে A লেখা গেঞ্জি পড়লেন কেনো?"

"আবার? এরপর থেকে যা কিনব সব তোমাকে সাথে নিয়ে কিনব। দরকার হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখে নিব A অক্ষর আছে কি না!"

বন্যা মুচকি হেসে বলল,
" আমি মজা করেছি।"

তানভীর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
" কিন্তু আমি সিরিয়াস।"



রাত ১০ টা বেজে ২৬ মিনিট৷ মেঘ সদর দরজার কাছে পায়চারি করছে। মোজাম্মেল খান সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। হঠাৎ আবির এসে দরোজায় দাঁড়াতেই মেঘ বলল,
"কোথায় যাচ্ছেন?"

আবিরের সহজসরল জবাব,
" বাসায়।"

মেঘ চাপা স্বরে বলল,
"বলেছি না, এই বাসায় আপনার প্রবেশ নিষিদ্ধ।"

আবির চোখ ঘুরিয়ে মোজাম্মেল খানের দিকে এক নজর দেখলেন৷ পরপর মেঘের দিকে

2 months ago (edited) | [YT] | 198



@AbdulShukkur-n4s

কতো টাকা

2 days ago | 0

@Sumaiyakhatun-r2e

next part 😊

2 months ago | 0

@MSTTABASUMKHATUN-vv9nk

Next part please apu😂😂

2 months ago | 1

@lamha4528

❤❤❤❤

2 months ago | 1  

@monisha-d7b

এটা পড়ে আমি হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছি 😂😂😂😂

2 months ago | 2  

@MdOliurRahman-d4c

Next part plz plz

2 months ago | 2  

@jeontasnim-p2e

Api 4 part koba diba❤

2 months ago | 1  

@Tania.a..27

Thank you sooo muchh apuu❤❤❤❤❤

2 months ago | 1  

@mdnanu3237

❤❤❤❤❤❤❤❤❤

2 months ago | 1  

@onikahmed-n1u

Next part den apu plzzzz

2 months ago | 1  

@Nadiya...8.o

আপু প্লিজ বলেন পরের পাট কবে দিবেন❤😊

2 months ago | 3  

@mdnanu3237

Thanks আপু

2 months ago | 1  

@MDMuradHossain-k4q

Ami crom theka already purata pore falci

2 months ago | 0

@mongalapoali3798

2 week hoye gelo Kobe Next part asbe??

2 months ago | 0

@MiahEbrahim

part 4 ❤

2 months ago | 0

@atikarahmannishi4042

Next part

2 months ago | 0

@Sharmin_Akter-1486

Akhon o next part ase nai😮‍

2 months ago | 0

@Sharmin_Akter-1486

Next part kobe 😭

2 months ago | 1  

@miss.aroshi.143

salma apur,,id link ta diba plz,,,😢😢

2 months ago | 0