দুজন একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।হিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে শুধু।হঠাৎ'ই হিয়া আস্তে করে বায়ু দূষণ করে।
-'ওহ নো! বড় আম্মুউউউউউউউ...
আহির চেঁচিয়ে উঠে। । ।
শাহরিয়ার পরিবারের ছোট্ট রাজকন্যার আজ জন্মদিন।সবাই মিলে বাগান বাড়িতে এসেছে তারা। জায়গাটাকে সাজিয়েছে সুন্দর করে।একটা মাদুর পেতে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল সবাই।মাঝে কেটে গিয়েছে পনেরোটা বসন্ত।অথচ মনে হচ্ছে যেন এইতো সেইদিন'ই কুহু ভার্সিটিতে গেল আহনাফের সাথে দেখা হলো।কত কাণ্ড! আর আজ নাকি তাদের একটা মেয়েও আছে।আহনাফ আর কুহুর মেয়ে আরাবি হিয়া শাহরিয়ার।
ছেলের চিৎকার শুনে রোদেলা ভড়কে গেল।রাফি বললো
-'এই হতোচ্ছোরা আবার চেঁচায় কেন?
আয়ান বললো
-'আমার ছেলে আর তোমার ছেলে একসাথে হলে ঝামেলা হয়না কোনদিন! আবার লেগেছে বোধহয় দুটো...
নাতাশা 'চ' সূচক শব্দ করলো।
-'হিয়াকে নিয়ে আমার লেগেছে বোধহয় দুজনে...
তখন'ই হিয়াকে চ্যাংদোলা করে আমান আর আহির নিয়ে এলো।আহির বললো
-'বড় আম্মু...তোমার মেয়ে ইয়ে করে দিয়েছে...ধরোওওও...
আমান আস্তে করে বললো
-'বড় হলে লজ্জা পাবি তানাহলে আমিই পরিষ্কার করে দিতাম,আমার সুহাসিনী।
আহির বোধহয় শুনেছে।সে বললো
-'আমার বেইবিগার্লকে বড় হতে দে এরপর দেখি না কি হয়! কাকে সে লজ্জা পায়..
আমান ঠোঁট বাঁকালো।কুহু গিয়ে মেয়েকে ধরার আগে আহনাফ গিয়ে ধরে।
-'আমার আম্মা! কি করেছেন এটা আপনি? বলেছি না টয়লেট পেলে বলবেন!
-'তলি বাবা..
আহনাফ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলে
-'ওলে বাবাকি জান! এরপর থেকে বলবেন।কেমন?
-'আততা...
হাসলো আহনাফ।মেয়ে তার প্রাণ।মা ডাক তার মেয়ের জন্য'ই জীবন্ত হয়েছে।তানাহলে মা বলে তো সে ডাকতেই পারেনি কোনোদিন।আহনাফ মেয়েকে চোখে হারায় এজন্য বলতে গেলে।কুহু হাসলো বাবা-মেয়ের কেমিস্ট্রি দেখে।
আদিতের পাশেই তার সিনিয়র বউ রাইফা বসে।কম খাঁটুনি হয়নি তার বিয়ের সময়! কত বলে কয়ে রাজি করিয়েছিল সে ভাভাগো!আদিত সেই কথা মনেও করতে চায় না।সে বললো
-'আমাদের হতোচ্ছোরা কোথায়?
পাশ থেকে আরিফ বললো
-'অবশ্য'ই আমার মেয়েকে নিয়ে চিপায় ঘুরছে।তুই শুনে রাখ আদিত তোর ঐ ডিস্কো ছেলের সাথে আমি মোটেও আমার মেয়ের বিয়ে দিব না।
-'ঐ ছেলের কাছে কোন মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে?ছেলেটাকে মানুষ করতে হবে।
-'হেই ড্যাডি!
রাইফা বিরক্ত নিয়ে ছেলের দিকে তাকায়।বয়স চৌদ্দ হলে কি হবে দেখতে দামড়া।
-'বাবা বললে কি তোর মুখে ঠাডা পড়বে রে হতোচ্ছারা!
আদিত কথাটা বলতেই আরাফ বললো
-'কুল! হাইপার হচ্ছো কেন?
-'ভদ্রভাবে কথা বলো আরাফ।আমান ভাইকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো।
কথাটা বললো আরিফের মেয়ে আফনান।বারো বছর বয়স।মাথায় হিজাব বাঁধা তার।নিধি ছোট থেকেই মেয়েকে অশ্লীল দুনিয়া থেকে দূরে দূরে রাখছে।হিজাব পড়া শিখিয়েছে মেয়েকে সে।আফনানের কথাটা শুনে আরাফ বললো
-'আচ্ছা।
আদিত বললো
-'বাপের কথা তো শুনো না।আবার আফনান বলায় আচ্ছা বলো!
আরাফ বললো
-'ইয়ো ইয়ো কুল বাবা!
আদিত জুতোটা খুলতে নিলে রাইফা আটকে দিল।
-'তোর ইয়ো ইয়ো পেছন দিয়ে দিব...কোথ্থেকে নিয়ে এসেছো একে রাইফেল? এ মোটেও আমার ছেলে নয়।হতেই পারে না।
সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফ মেয়েকে ক্লিন করে আসছিল।কথাটা শুনে বললো
রাফির মতোই ফিসফিস করে বললো আহির।রোদেলা ভরকে ছেলের দিকে তাকায়।রাফি বললো
-'আচ্ছা তাহলে রাতে তুই অন্যরুমে ঘুমাবি।
-'কেন কেন?
রোদেলা রাফির পিঠে ধরাম করে কিল বসায়।সবাই তাদের দিকে তাকায়।আহির বললো
-'আরেহ তেমনকিছু না।বাবাকে মা মেরেছে।
সবাই হেসে ফেললো।রাফি বললো
-'খুব উপকার করলেন সবাইকে জানিয়ে।বেয়াদব ছেলে! যা ভাগ এখান থেকে...
আহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল।অখিল শাহরিয়ারের পাশে বসে তার সাথে গল্প করতে লাগলো।কীভাবে তাকে জেরিন বেগম ঠকিয়েছেন সেই কাহিনী তিনি তার প্রত্যেকটা নাতি-নাতনিকে শুনিয়েছেন।বারবার শোনান তিনি সেই কাহিনী।আর প্রত্যেকবার আহির বলে
-'আলহামদুলিল্লাহ আমার কোনো ভাই নেই।
আনিসা বেগম বিদেশ চলে গিয়েছেন আবার।একা একাই থাকেন তিনি সেখানে।তাকে থাকতে বললেও তিনি থাকেননি এখানে।চলে গিয়েছেন।রোদেলা আর নিধি মিলে সব ঠিকঠাক করে সবাইকে ডাক দেয়।
-'সব রেডি...সবাই চলে এসো...
বাচ্চারা চলে আসে দৌঁড়ে।মাদুরে কেক রাখা।কেকের মাঝে লেখা.."Happy Birthday Princess" নিচে ছোট্ট করে লিখা "Hiya"... হিয়া এখন তার নানা ভাইয়ের কোলে।মাদুরে বসিয়ে দিল তাকে সাখাওয়াত আলম।তার এক পাশে আহির দাঁড়ালো আরেকপাশে আমান।দুজন হাঁটু মুড়ে বসে ওর পাশে।তার দুইদিকে আরাফ আর আফনান দাঁড়িয়ে।আরিফ ক্যামেরা রেডি করলো।এত সুন্দর মুহূর্ত..ছবি না তুললে হয়!সবাই সুন্দর করে দাঁড়ালো।কিন্তু ছবিটা তুলবে কে? সবার মুখে চিন্তার ছাপ।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো।তাকালো সবাই সেইদিকে।গাড়ি থেকে নামলো ওসি সাহেব।ভদ্রলোকের ভুড়ি এখন বিশাল হয়েছে।হিডেন ট্যালেন্টের পাওয়ারও বেড়েছে বোধহয়।আহনাফ অমায়িক হেসে এগিয়ে গেল।সে নিজেই ইনভাইট করেছিল তাকে।
-'আরেহ! কেমন আছেন?
ওসি সাহেব হেসে বললেন
-'এই তো আল্লাহ রেখেছেন।তবে আগের মতো আর খেতে পারি না।এটাই সমস্যা।
সবাই খুকখুক করে কেঁশে উঠলো।না খেয়েই এই এত বড় পেট! মনে হচ্ছে নয় মাসের প্রেগনেন্ট।ওসি সাহেব বললেন
-'আজকাল যার তার সামনে আমার হিডেন ট্যালেন্ট বেরিয়ে যাচ্ছে।কি জ্বালা বলেন তো!
-'ইয়ে..হিডেন ব্যাপার স্যাপার হিডেন রাখাই ভালো।সবাই জেনে কি আর ভেল্যু থাকে! তাই আরকি..
-'দামি কথা বলেছেন মিস্টার আরিফ।
আদিত বললো
-'আচ্ছা ওসি সাহেব তাহলে আমাদের ছবিটা তুলে দিক।
ওসি সাহেব দেদার হেসে বললেন
-'অবশ্য'ই দিব।আপনারা দাঁড়ান সবাই।
আরিফ ক্যামেরা দিল তার কাছে।ওসি সাহেব পেটে হাত বুলিয়ে বললেন
-'রেডি সবাই?
"হ্যাঁ"..সবাই একসাথে বললো।আহনাফ কুহুর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।কুহু ভড়কে তাকায় তার দিকে।আহনাফও তাকায়।তার ঠোঁটের কোণে হাসি।প্রাপ্তির হাসি।আহনাফ আজ পরিপূর্ণ।আল্লাহ'র কাছে কৃতজ্ঞ সে। এদিকে রাফি রোদেলার কোমড়ে চিমটি কাটে। রোদেলা রেগে তাকায় রাফির দিকে।রাফি ঠোঁট চোকা করে চুমু দেওয়ার মতো।আদিত রাইফার কাঁধে হাত দিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলায়।আরিফ নিধির বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে হাসে।আরাফ আফনানের হিজাব ধরে টান মারে যার দরূণ বেচারি তার দিকে ঝুঁকে যায়। এদিকে আমান আর আহির দুজন একসাথে হিয়ার দুগালে চুমু বসায় আর হিয়া গোল গোল চোখ করে।ব্যাস! ক্লিক হয়ে গেল এভাবেই।ওসি সাহেব বললেন --"দুর্দান্ত!"
সবাই হেসে ফেললো।আরাফের কৌতুহল জেগেছে ওসি সাহেবের হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে।সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এক কোণায় ওসি সাহেবকে নিয়ে গিয়ে বললো তার হিডেন ট্যালেন্ট দেখাতে।বেচারা অনেক এক্সাইটেড।ওসি সাহেব হো হো করে হাসেন।এরপর বললেন
-'তুমি সিউর তো?
-'হ্যাঁ হ্যাঁ..
ওসি সাহেব বুঝলেন এই ছেলের কৌতুহল বেশি।এতো কৌতুহল তো ভালো নয়।আজ এটা নিয়ে কৌতুহল দেখাচ্ছে কাল গাঞ্জা কি তা জানবে খেতে যে যাবে না তার কি গেরান্টি?ওসি সাহেব কিছু ভাবলেন।এরপর পেছন ঘুরে আরাফের মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্ট প্রকাশ করলেন।ছেলেটা যেমন ছিল তেমনভাবেই দাঁড়িয়ে।ওসি সাহেব তার হাত ধরে নাড়া দিতেই সে নড়লো।
-'এই ছেলে!
আরাফ হাত দিয়ে নাক চেপে বললো
-'দোয়া করি এই হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে অনেক দূর যান...তবে আর ফিরে আইসেন না প্লিজজ...
আরাফ পেছন ঘুরে চলে গেল।মাতালের মতো হাঁটছে সে।আদিত ছেলের এমন অবস্থা দেখে বললো
-'এই! কি হয়েছে তোর?
-'তেমন কিছু না।ওসি সাহেব আমার মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্টটা ছুঁড়ে মেরেছেন।
আহনাফ হেসে ফেললো।নিজ বাহুতে আকড়ে ধরলো তাকে।ভালোবাসা প্রথম দ্বিতীয় বলতে কি আদেও কিছু হয়?শেষ পর্যন্ত মনের গহীণে যে থেকে যায় সেই হচ্ছে আসল।প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যদি সঠিক মানুষ পাওয়া যায় তবে ক্ষতি কি! এদের দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্কটা বহাল থাকুক সারাজীবন।
Fariha's Journey
#প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ
#লেখিকা_অনন্যা
#অন্তিম_পর্ব
হিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে।আমান ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো।
-'বাদ দে...শুভ জন্মদিন।
-'তনবাদ...
আহির খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো।
-'তুই ও কিউট তোর কথাগুলোও কিউট।উম্মাহ!
আহির হিয়ার গালে চুমু দিল।আমান বললো
-'এই তোমাকে না বারণ করেছি যে ওকে চুমু দিবে না।
আহির বললো
-'তাই?
বলেই ও হিয়ার গালে টপাটপ আরো চুমু খেল।আমান গিয়ে থাবা বসিয়ে হিয়াকে নিজের কোলে নিতে চাইলো।কিন্তু আহির ধরে ফেললো।আমান বললো
-'ছেড়ে দাও ওকে..
-'আহির শাহরিয়ার ছাড়ার জন্য ধরে না কিছু, আমান সিদ্দিকি।
-'আমান সিদ্দিকির জিনিসে নজর দিও না।আগেও বারণ করেছি।
দুজন একে অপরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।হিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে শুধু।হঠাৎ'ই হিয়া আস্তে করে বায়ু দূষণ করে।
-'ওহ নো! বড় আম্মুউউউউউউউ...
আহির চেঁচিয়ে উঠে।
।
।
শাহরিয়ার পরিবারের ছোট্ট রাজকন্যার আজ জন্মদিন।সবাই মিলে বাগান বাড়িতে এসেছে তারা। জায়গাটাকে সাজিয়েছে সুন্দর করে।একটা মাদুর পেতে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল সবাই।মাঝে কেটে গিয়েছে পনেরোটা বসন্ত।অথচ মনে হচ্ছে যেন এইতো সেইদিন'ই কুহু ভার্সিটিতে গেল আহনাফের সাথে দেখা হলো।কত কাণ্ড! আর আজ নাকি তাদের একটা মেয়েও আছে।আহনাফ আর কুহুর মেয়ে আরাবি হিয়া শাহরিয়ার।
ছেলের চিৎকার শুনে রোদেলা ভড়কে গেল।রাফি বললো
-'এই হতোচ্ছোরা আবার চেঁচায় কেন?
আয়ান বললো
-'আমার ছেলে আর তোমার ছেলে একসাথে হলে ঝামেলা হয়না কোনদিন! আবার লেগেছে বোধহয় দুটো...
নাতাশা 'চ' সূচক শব্দ করলো।
-'হিয়াকে নিয়ে আমার লেগেছে বোধহয় দুজনে...
তখন'ই হিয়াকে চ্যাংদোলা করে আমান আর আহির নিয়ে এলো।আহির বললো
-'বড় আম্মু...তোমার মেয়ে ইয়ে করে দিয়েছে...ধরোওওও...
আমান আস্তে করে বললো
-'বড় হলে লজ্জা পাবি তানাহলে আমিই পরিষ্কার করে দিতাম,আমার সুহাসিনী।
আহির বোধহয় শুনেছে।সে বললো
-'আমার বেইবিগার্লকে বড় হতে দে এরপর দেখি না কি হয়! কাকে সে লজ্জা পায়..
আমান ঠোঁট বাঁকালো।কুহু গিয়ে মেয়েকে ধরার আগে আহনাফ গিয়ে ধরে।
-'আমার আম্মা! কি করেছেন এটা আপনি? বলেছি না টয়লেট পেলে বলবেন!
-'তলি বাবা..
আহনাফ মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলে
-'ওলে বাবাকি জান! এরপর থেকে বলবেন।কেমন?
-'আততা...
হাসলো আহনাফ।মেয়ে তার প্রাণ।মা ডাক তার মেয়ের জন্য'ই জীবন্ত হয়েছে।তানাহলে মা বলে তো সে ডাকতেই পারেনি কোনোদিন।আহনাফ মেয়েকে চোখে হারায় এজন্য বলতে গেলে।কুহু হাসলো বাবা-মেয়ের কেমিস্ট্রি দেখে।
আদিতের পাশেই তার সিনিয়র বউ রাইফা বসে।কম খাঁটুনি হয়নি তার বিয়ের সময়! কত বলে কয়ে রাজি করিয়েছিল সে ভাভাগো!আদিত সেই কথা মনেও করতে চায় না।সে বললো
-'আমাদের হতোচ্ছোরা কোথায়?
পাশ থেকে আরিফ বললো
-'অবশ্য'ই আমার মেয়েকে নিয়ে চিপায় ঘুরছে।তুই শুনে রাখ আদিত তোর ঐ ডিস্কো ছেলের সাথে আমি মোটেও আমার মেয়ের বিয়ে দিব না।
-'ঐ ছেলের কাছে কোন মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে?ছেলেটাকে মানুষ করতে হবে।
-'হেই ড্যাডি!
রাইফা বিরক্ত নিয়ে ছেলের দিকে তাকায়।বয়স চৌদ্দ হলে কি হবে দেখতে দামড়া।
-'বাবা বললে কি তোর মুখে ঠাডা পড়বে রে হতোচ্ছারা!
আদিত কথাটা বলতেই আরাফ বললো
-'কুল! হাইপার হচ্ছো কেন?
-'ভদ্রভাবে কথা বলো আরাফ।আমান ভাইকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো।
কথাটা বললো আরিফের মেয়ে আফনান।বারো বছর বয়স।মাথায় হিজাব বাঁধা তার।নিধি ছোট থেকেই মেয়েকে অশ্লীল দুনিয়া থেকে দূরে দূরে রাখছে।হিজাব পড়া শিখিয়েছে মেয়েকে সে।আফনানের কথাটা শুনে আরাফ বললো
-'আচ্ছা।
আদিত বললো
-'বাপের কথা তো শুনো না।আবার আফনান বলায় আচ্ছা বলো!
আরাফ বললো
-'ইয়ো ইয়ো কুল বাবা!
আদিত জুতোটা খুলতে নিলে রাইফা আটকে দিল।
-'তোর ইয়ো ইয়ো পেছন দিয়ে দিব...কোথ্থেকে নিয়ে এসেছো একে রাইফেল? এ মোটেও আমার ছেলে নয়।হতেই পারে না।
সবাই হা করে তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফ মেয়েকে ক্লিন করে আসছিল।কথাটা শুনে বললো
-'এটা তোর'ই ছেলে।তোর মতোই বান্দর।এটাই তার প্রমাণ।
আরাফ বললো
-'আংকেল অপমান্স করবেন না।ইয়ো! হিয়ামনি! হ্যাপি বার্থ ডে...
হিয়া ফোকলা দাঁত বের করে হেসে বললো
-'তনবাত...
আরাফ হেসে বললো
-'ওলকম।
সবাই হেসে ফেললো।আহান শাহরিয়ার আর সাখাওয়াত আলম গিয়েছিলেন হাঁটতে।এই বয়সে একটু হাঁটাহাঁটি না করলেই নয়! দুজন এসেই নাতনির উপর হামলে পড়লো।যত রূপকথা আছে সব শুনিয়ে ফেলবে যেন।আহনাফ বাবার পাকা চুল দেখে বললো
-'কত তাড়াতাড়ি সময় চলে গেল।তাই না?
কুহু বললো
-'হুম..মনে হচ্ছে যেন এই তো ঐদিন'ই আপনার সাথে দেখা হলো।
আহনাফ হাসলো।কুহু আহনাফের কাঁধে মাথা রেখে বললো
-'প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যে আপনার মতো কাউকে পেয়ে যাবো ভাবতেও পারিনি।ধন্যবাদ মিস্টার খাটাশ।
আহনাফ নাক কুচকায়।
-'এতগুলো বছর হয়ে গেল তাও খাটাশ নামটা বাদ দিলে না!
কুহু খিলখিল করে হাসে।
রোদেলা কেক বের করে সাজাচ্ছিল।রাফি সবাইকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদেলার গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বসলো।রোদেলা চমকে তাকালো তার পানে।রাফি বললো
-'ব্যাক দাও.. ব্যাক দাও এবার..
রোদেলা চোখ রাঙায়।রাফি বললো
-'হয় ব্যাক দাও তানাহলে আহিরের ভাই-বোন আনার ব্যাবস্থা করবো আমি।
-'ব্যাক দিও না আম্মু।আমার একটা বোন চাই।
রাফির মতোই ফিসফিস করে বললো আহির।রোদেলা ভরকে ছেলের দিকে তাকায়।রাফি বললো
-'আচ্ছা তাহলে রাতে তুই অন্যরুমে ঘুমাবি।
-'কেন কেন?
রোদেলা রাফির পিঠে ধরাম করে কিল বসায়।সবাই তাদের দিকে তাকায়।আহির বললো
-'আরেহ তেমনকিছু না।বাবাকে মা মেরেছে।
সবাই হেসে ফেললো।রাফি বললো
-'খুব উপকার করলেন সবাইকে জানিয়ে।বেয়াদব ছেলে! যা ভাগ এখান থেকে...
আহির ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল।অখিল শাহরিয়ারের পাশে বসে তার সাথে গল্প করতে লাগলো।কীভাবে তাকে জেরিন বেগম ঠকিয়েছেন সেই কাহিনী তিনি তার প্রত্যেকটা নাতি-নাতনিকে শুনিয়েছেন।বারবার শোনান তিনি সেই কাহিনী।আর প্রত্যেকবার আহির বলে
-'আলহামদুলিল্লাহ আমার কোনো ভাই নেই।
আনিসা বেগম বিদেশ চলে গিয়েছেন আবার।একা একাই থাকেন তিনি সেখানে।তাকে থাকতে বললেও তিনি থাকেননি এখানে।চলে গিয়েছেন।রোদেলা আর নিধি মিলে সব ঠিকঠাক করে সবাইকে ডাক দেয়।
-'সব রেডি...সবাই চলে এসো...
বাচ্চারা চলে আসে দৌঁড়ে।মাদুরে কেক রাখা।কেকের মাঝে লেখা.."Happy Birthday Princess" নিচে ছোট্ট করে লিখা "Hiya"... হিয়া এখন তার নানা ভাইয়ের কোলে।মাদুরে বসিয়ে দিল তাকে সাখাওয়াত আলম।তার এক পাশে আহির দাঁড়ালো আরেকপাশে আমান।দুজন হাঁটু মুড়ে বসে ওর পাশে।তার দুইদিকে আরাফ আর আফনান দাঁড়িয়ে।আরিফ ক্যামেরা রেডি করলো।এত সুন্দর মুহূর্ত..ছবি না তুললে হয়!সবাই সুন্দর করে দাঁড়ালো।কিন্তু ছবিটা তুলবে কে? সবার মুখে চিন্তার ছাপ।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো।তাকালো সবাই সেইদিকে।গাড়ি থেকে নামলো ওসি সাহেব।ভদ্রলোকের ভুড়ি এখন বিশাল হয়েছে।হিডেন ট্যালেন্টের পাওয়ারও বেড়েছে বোধহয়।আহনাফ অমায়িক হেসে এগিয়ে গেল।সে নিজেই ইনভাইট করেছিল তাকে।
-'আরেহ! কেমন আছেন?
ওসি সাহেব হেসে বললেন
-'এই তো আল্লাহ রেখেছেন।তবে আগের মতো আর খেতে পারি না।এটাই সমস্যা।
সবাই খুকখুক করে কেঁশে উঠলো।না খেয়েই এই এত বড় পেট! মনে হচ্ছে নয় মাসের প্রেগনেন্ট।ওসি সাহেব বললেন
-'আজকাল যার তার সামনে আমার হিডেন ট্যালেন্ট বেরিয়ে যাচ্ছে।কি জ্বালা বলেন তো!
আহনাফ ভাবুক হয়ে বললো
-'সত্যিই খুব চিন্তার বিষয়।
-'এখন তো তাও অবসরে আছি বলে।এরকম হুটহাট হিডেন ট্যালেন্ট প্রকাশ পেলে চলতো নাকি!
আরাফ বললো
-'হিডেন ট্যালেন্ট! আমরাও দেখি একটু আপনার হিডেন ট্যালেন্ট আংকেল।
সবাই চেঁচিয়ে উঠলো "নাআআআআআ"।ভদ্রলোক ভড়কে গেলেন।আরিফ মেকি হেসে বললো
-'ইয়ে..হিডেন ব্যাপার স্যাপার হিডেন রাখাই ভালো।সবাই জেনে কি আর ভেল্যু থাকে! তাই আরকি..
-'দামি কথা বলেছেন মিস্টার আরিফ।
আদিত বললো
-'আচ্ছা ওসি সাহেব তাহলে আমাদের ছবিটা তুলে দিক।
ওসি সাহেব দেদার হেসে বললেন
-'অবশ্য'ই দিব।আপনারা দাঁড়ান সবাই।
আরিফ ক্যামেরা দিল তার কাছে।ওসি সাহেব পেটে হাত বুলিয়ে বললেন
-'রেডি সবাই?
"হ্যাঁ"..সবাই একসাথে বললো।আহনাফ কুহুর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।কুহু ভড়কে তাকায় তার দিকে।আহনাফও তাকায়।তার ঠোঁটের কোণে হাসি।প্রাপ্তির হাসি।আহনাফ আজ পরিপূর্ণ।আল্লাহ'র কাছে কৃতজ্ঞ সে। এদিকে রাফি রোদেলার কোমড়ে চিমটি কাটে। রোদেলা রেগে তাকায় রাফির দিকে।রাফি ঠোঁট চোকা করে চুমু দেওয়ার মতো।আদিত রাইফার কাঁধে হাত দিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলায়।আরিফ নিধির বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে হাসে।আরাফ আফনানের হিজাব ধরে টান মারে যার দরূণ বেচারি তার দিকে ঝুঁকে যায়। এদিকে আমান আর আহির দুজন একসাথে হিয়ার দুগালে চুমু বসায় আর হিয়া গোল গোল চোখ করে।ব্যাস! ক্লিক হয়ে গেল এভাবেই।ওসি সাহেব বললেন --"দুর্দান্ত!"
সবাই হেসে ফেললো।আরাফের কৌতুহল জেগেছে ওসি সাহেবের হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে।সে কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এক কোণায় ওসি সাহেবকে নিয়ে গিয়ে বললো তার হিডেন ট্যালেন্ট দেখাতে।বেচারা অনেক এক্সাইটেড।ওসি সাহেব হো হো করে হাসেন।এরপর বললেন
-'তুমি সিউর তো?
-'হ্যাঁ হ্যাঁ..
ওসি সাহেব বুঝলেন এই ছেলের কৌতুহল বেশি।এতো কৌতুহল তো ভালো নয়।আজ এটা নিয়ে কৌতুহল দেখাচ্ছে কাল গাঞ্জা কি তা জানবে খেতে যে যাবে না তার কি গেরান্টি?ওসি সাহেব কিছু ভাবলেন।এরপর পেছন ঘুরে আরাফের মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্ট প্রকাশ করলেন।ছেলেটা যেমন ছিল তেমনভাবেই দাঁড়িয়ে।ওসি সাহেব তার হাত ধরে নাড়া দিতেই সে নড়লো।
-'এই ছেলে!
আরাফ হাত দিয়ে নাক চেপে বললো
-'দোয়া করি এই হিডেন ট্যালেন্ট নিয়ে অনেক দূর যান...তবে আর ফিরে আইসেন না প্লিজজ...
আরাফ পেছন ঘুরে চলে গেল।মাতালের মতো হাঁটছে সে।আদিত ছেলের এমন অবস্থা দেখে বললো
-'এই! কি হয়েছে তোর?
-'তেমন কিছু না।ওসি সাহেব আমার মুখ বরাবর তার হিডেন ট্যালেন্টটা ছুঁড়ে মেরেছেন।
সবাই নিরব রইলো এরপরেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সকলে।আরাফ লজ্জা পেয়ে ভেতরে দৌঁড় লাগালো।ওসি সাহেব পেটে হাত বুলিয়ে বললেন
-'আর কেউ দেখবে নাকি আমার হিডেন ট্যালেন্ট?
সবাই হু হা করে হাসছে।বাকি বাচ্চারা বুঝলো না।তবুও বাবা-মায়ের হাসি দেখে হাসলো।সবশেষে কেক কাটা হলো।সবাই কেক খাওয়ার চেয়ে মাখামাখি নিয়ে ব্যস্ত বেশি।একেকজন কেক দিয়ে মাখামাখি করে ফেলেছে চেহারা।হিয়ার গালে একটু আগে আহির কেক মাখিয়েছে।হিয়া বলে উঠলো
-'বাঙিল পলা!
সবাই আরেকদফা হাসলো।কুহুর কার্বনকপি এটা।আহনাফ কুহুর কানেকানে কিছু বলতেই কুহু বললো
-'বাঙ্গির পোলা! যান ভাগেন!
আহনাফ হেসে ফেললো।নিজ বাহুতে আকড়ে ধরলো তাকে।ভালোবাসা প্রথম দ্বিতীয় বলতে কি আদেও কিছু হয়?শেষ পর্যন্ত মনের গহীণে যে থেকে যায় সেই হচ্ছে আসল।প্রণয়ের অন্তিমক্ষণে এসে যদি সঠিক মানুষ পাওয়া যায় তবে ক্ষতি কি! এদের দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্কটা বহাল থাকুক সারাজীবন।
সমাপ্ত।
2 weeks ago | [YT] | 49