Fairy Of Novel

প্রণয়ের কথা– পর্ব ৩১!
লেখিকা: মারজিয়া আক্তার .(Special moment with favourite person)

কলেজ ক্যাম্পাসে তখন বিকেলের নরম আলো ছড়িয়ে পড়েছে। রায়হান আর আয়াতের মাঝে সম্পর্কটা ঠিক আগের মতো নেই, তবুও রায়হান দুষ্টুমি করতে ছাড়ে না। হঠাৎ আয়াতের সামনে শুভ এসে দাঁড়াল—সোজা প্রপোজ করে ফেললো তাকে। আয়াত প্রথমে থমকে গেল, তারপর একটু তাকিয়ে বলল, রায়হানের মনের কথা বুঝতে বললো"

— “আমি পরে ভেবে দেখবো।”
–"শান্ত কিছুটা বুঝলো আয়াত তাকে মিথ্যা আশা ছাড়া কিছুই দিচ্ছে না! তাই সে সেখান থেকে সরে গেলো!

এই কথাটা ঠিক যে সময় বের হলো আয়াতের মুখ থেকে, রায়হান তখন একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। চোখের অভিব্যক্তি এক সেকেন্ডে বদলে গেল তার। অভিমানে একটাও কথা না বলে সেখান থেকে সরে গেল।

আয়াত বুঝলো রায়হান সব শুনেছে। সে পিছু পিছু গেল রায়হানের খোঁজে। খুঁজতে খুঁজতে লাইব্রেরিতে এসে দেখে, রায়হান একা এক চেয়ারে বসে, মাথা নিচু করে রেখেছে। তার চোখ থেকে পানি পড়ছে।

— “কি হয়েছে রায়হান?” – নরম স্বরে জিজ্ঞেস করলো আয়াত।

রায়হান মুখ না তুলে পালটা প্রশ্ন করলো,
— “তুই শুভকে পছন্দ করিস?”

আয়াত ধীরে বলল,
— “জানি না।”

রায়হান হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
— “শোন আয়াত, তোর চোখে যেদিন আমার প্রতি ঘৃণা দেখবো, ওইদিন থেকে আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাবি না!”

এই বলে সে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নেয়, আয়াত সামনে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়।

— “ভয় পাও?” – আয়াত জিজ্ঞেস করলো।

— “কিসের ভয়?”

— “বিশ্বাস করো না আমায়?”

রায়হান একটু থেমে বলে,
— “যদি তুই সেটা রাখতে জানিস!”

আয়াত কাঁধ ঝাঁকিয়ে হেসে বললো,
— “এত রাগ দেখালে কপালে বউ জুটবে না কিন্তু!”

রায়হান চোখ সরিয়ে বলল,
— “মজা করিস?”

— “কেন? অধিকার নেই বুঝি?”

রায়হানের কণ্ঠ আরেকটু কঠিন হয়ে উঠলো,
— “যা, শুভকে ‘হ্যাঁ’ বলে দে! আমি গেলাম।”

আয়াত চুপচাপ বলল,
— “বললে তোমার কি রায়হান?”

রায়হান ঘুরে তাকিয়ে বললো,
— “আমি কী দেখিয়ে দিবো? আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো, তবে দেখিয়ে দিতাম ভালোবাসা কাকে বলে!”

এই কথা শুনে আয়াত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। রায়হান বাইকে চড়ে চলে গেল, পিছনে শুধুই ধুলো, অভিমান আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা এক আয়াত।

সেদিন রাতে আয়াত ঠিক করলো, রায়হানের মন ভালো করার জন্য সে যাবে সেই জায়গায় — যেখানে দুজনেই সুখে আর দুঃখে ছুটে যেতো — নদীর পাড়ে।

আয়াত পড়লো সেই কালো শাড়িটা, যেটা রায়হান তাকে দিয়েছিলো। চুপচাপ চলে গেল নদীর ধারে সূর্যাস্তের দিকে। এদিকে রায়হান বাইকে বসে একা চিৎকার করছে,

— “হ্যাঁ পৃথিবী! আমি আর সহ্য করতে পারছি না! হয় আমায় নিয়ে যাও আল্লাহ, নয়তো আমার প্রেয়সীকে আমায় ফিরিয়ে দাও! আমি সত্যিই তাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না!”

রায়হানের চোখে জল, ঠোঁটে কাঁপুনি।


— “আমি জানি আমার বাবা-মা আমার স্বপ্ন জানে না... আমি জানি আয়াত হয়তো বোঝেও না আমি কী পরিমাণ ভালোবাসি তাকে... কিন্তু আমি জানি, আমি যদি আজও না বলি, আমি একদিন পাগল হয়ে যাবো। আয়াত, তুই শুধু একবার ফিরে আয়…”

ঠিক তখনই তার পাশে এসে বসে এক পরিচিত মেয়ে। কালো শাড়িতে যেন নদীর জল মিশে আছে তার চোখে। রায়হান ঘুরে তাকায়… তার আয়াত!

আয়াত আস্তে বলে,
— “আমি কী ক্ষমার অযোগ্য?”
রায়হান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো - তার অভিমান অভিযোগ সব সেকেন্ডই যেনো অদৃশ্য...
রায়হানের চোখ ভিজে ওঠে, তার কণ্ঠ কেঁপে বলে,
— “তুই যদি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাপীও হোস, তবুও আমার কাছে তুই নিষ্পাপ… আর ক্ষমা? সেটা তো অনেক আগেই হয়ে গেছে আয়াত।”

দুজন অনেক কথা বলে। মন খুলে, চোখ ভিজিয়ে, স্পর্শে ছুঁয়ে…

তবে আজও কেউ কাউকে বলেনি ‘ভালোবাসি’। আজও সে শব্দ দুটো লুকিয়ে থাকে চোখে, আচরণে, হৃদস্পন্দনে।

কিছুক্ষণ পরে রায়হান আয়াতকে বলে,
— “চল, বাইকে ঘুরতে যাই।”

আয়াত হেসে বলে,
— “চলো।”

বাইকে চড়ে আয়াত রায়হানের পিঠে নরমভাবে হাত রাখে। রায়হান হেলমেটের নিচে মুচকি হেসে বলে,
— "আমার চাওয়া পূরণ হচ্ছে আজ, ধীরে ধীরে…”

রাত হয়ে এলে রায়হান আয়াতকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল।

— “সাবধানে থাকিস। কাল তোর জন্য কিছু নতুন রেডি থাকবে, রেডি থাকিস!”

রায়হান চলে গেল তার বাবার অফিসে বাইক নিয়ে। অফিসের দরজায় পৌঁছে বললো,
— “এবার দায়িত্ব নিতে হবে।”


রাতে আয়াত ফোন করে ম্যাসেজ করলো:
— “কাল কী পড়বো? কোথায় দেখা করবো?”

রায়হান রিপ্লাই দিলো,
— “নীল শাড়ি! আমি তোকে নিতে আসবো ৫:০০ টায়। ওকে?”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো,
— “আচ্ছা 💙”

নীরব রাত, মিষ্টি কথা, আর আগামী দিনের প্রতীক্ষা…

চলবে....

3 weeks ago | [YT] | 1