'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' ! ১৯৫৪ সাল ! পথ চলা শুরু সন্ধ্যা-সুচিত্রার ! বাস্তবেও তাঁরা প্রিয় বন্ধু !
সন্ধ্যা-সুচিত্রা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের স্বরণীয় যুগ ! একে অপরকে সম্পূর্ণ করেছেন তাঁরা।
'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' গাইছেন সুচিত্রা সেন। সালটা ১৯৫৪। 'অগ্নিপরীক্ষা'র সেটে সে সময় যেন তারাদের হাট। উত্তম-সুচিত্রার ছবি। সর্বকালের সেরা প্রেম বোধহয় তাঁরাই একমাত্র পর্দায় এভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। আর তাঁদের প্রেমকে উজ্জ্বল আভায় রাঙিয়েছেন হেমন্ত ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একটা সময় বলা হত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় না থাকলে সুচিত্রা সেন মানুষের মনের ঘরে এতটা হয়ত পৌছতে পারতেন না। সুচিত্রার লিপে একের পর এক গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
সপ্তপদী ১৯৬১ সাল। বাইকে চলেছেন উত্তম-সুচিত্রা। অনবদ্য প্রেম। আর গলায় 'এই পথ যদি না শেষ হয়'। মাঝে মধ্যে সুচিত্রার 'তুমিই বলো' বা 'লালালালা'। যা শুনে সে সময় সকলে ভেবেছিলেন এই গলা সুচিত্রার নিজের। কিন্তু নয়। আসলে ওই গলা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। এমন ভাবেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন এই দুই শিল্পী। সন্ধ্যার গলা ছাড়া ভাবাই যেত না সুচিত্রা সেনকে।
সপ্তপদী মুক্তির পর বসুশ্রীতে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে এসেছিলেন উত্তম কুমার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সঙ্গে সেদিন 'এই পথ যদি না হয়' গানটি গেয়েছিলেন উত্তম কুমার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "সেদিনের সেই কথা মনে পড়লে, আমার আজও গায়ে কাঁটা দেয়।" সুচিত্রার লিপে যে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কত গান আছে তার ইয়ত্তা নেই। তার মধ্যে মনে দাগ কেটে যায়, 'কে তুমি আমারে ডাকো' (অগ্নিপরীক্ষা), ঘুম ঘুম চাঁদ (সবার উপরে), জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া (সবার উপরে), এই মধু রাত শুধু ফুল পাপিয়ার (সাগরিকা), কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে (পথে হল দেরি), আমার জীবনে নেই আলো (সূর্যতোরণ), নয় নয়, এ তো খেলা নয়(চাওয়া পাওয়া), এই পথ যদি না শেষ হয়(সপ্তপদী), আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি (বিপাশা), দু' চোখের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে (শ্রাবণ সন্ধ্যা) মতো গানগুলি।
এমন বহু গানে মন জিতেছেন সন্ধ্যা-সুচিত্রা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে বলেছিলেন, "সুচিত্রা সেন যেভাবে গানে লিপ দিতেন, তা দেখে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। শুধু মাত্র চোখ ও মুখের ভঙ্গিতে এমন করে গলা মিলাতে আর কাউকে দেখিনি।" শুধু গানেই নয়। এই জুটির মধ্যে ছিল আত্মার টান।
সুচিত্রা সেনের মৃত্যুদিনে টিভির সামনে পর্যন্ত বসতে পারেননি তিনি। 'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' সুচিত্রার লিপে হয়ে উঠেছিল অমর। অথচ এই গানকেই খারাপ বলেছিলেন পরিচালক বিভূতি লাহা। এই গানের সুর করেছিলেন অনুপম ঘটক। ছবির পরিচালকের একেবারেই গান পছন্দ হয়নি। সে কথা সঙ্গীত পরিচালককে জানাতেই কথা কাটাকাটি শুরু দুইয়ে। তবে বাকি সকলের এই গান ভাল লাগে। ছবির রেকর্ডিস্ট ছিলেন যতীন দত্ত। উনিও বললেন, ওঁর ভাল লেগেছে। গানের একটা জায়গায় ছিল “মিতা মোর কাকলী কুহু.......” ওঁরা ডিরেক্টরকে বললেন, এই জায়গায় সন্ধ্যার গলার কাজটা দেখুন। কী করে বলছেন গানটা কিছু হয়নি? ডিরেক্টর শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন। তারপর আজ এই গান ইতিহাস।
সুচিত্রা ও সন্ধ্যা শুধু সিনেমায় সেরা জুটি নয়। বাস্তবেও তাঁদের দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। সাত পাকে বাঁধা ছবিতে সুচিত্রা সেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। সে সময় সন্ধ্যা তাঁর বাড়িতে গিয়ে পারফিউম ও চাদর পরিয়ে দেন সুচিত্রাকে। এমনকি সিনেমা ছাড়ার একেবারে শেষ সময়ে সুচিত্রা সেন বেলুড়মঠে যেতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়েই।
তবে সুচিত্রা-সন্ধ্যা জুটি পর্দা এবং বাস্তবের বন্ধুত্বে এক সঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিল, গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু- দিয়েই। আজ আর তাঁরা কেউ নেই। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ায় বার বার উঠে আসবে এই সব স্মৃতি। আজ আলোর পথে হেঁটে যান তাঁরা দু'টিতে ! জুটিতে।
Indranil's_(World)
॥ সন্ধ্যা-সুচিত্রা ॥
'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' ! ১৯৫৪ সাল ! পথ চলা শুরু সন্ধ্যা-সুচিত্রার ! বাস্তবেও তাঁরা প্রিয় বন্ধু !
সন্ধ্যা-সুচিত্রা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের স্বরণীয় যুগ ! একে অপরকে সম্পূর্ণ করেছেন তাঁরা।
'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' গাইছেন সুচিত্রা সেন। সালটা ১৯৫৪। 'অগ্নিপরীক্ষা'র সেটে সে সময় যেন তারাদের হাট। উত্তম-সুচিত্রার ছবি। সর্বকালের সেরা প্রেম বোধহয় তাঁরাই একমাত্র পর্দায় এভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। আর তাঁদের প্রেমকে উজ্জ্বল আভায় রাঙিয়েছেন হেমন্ত ও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। একটা সময় বলা হত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় না থাকলে সুচিত্রা সেন মানুষের মনের ঘরে এতটা হয়ত পৌছতে পারতেন না। সুচিত্রার লিপে একের পর এক গান গেয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
সপ্তপদী ১৯৬১ সাল। বাইকে চলেছেন উত্তম-সুচিত্রা। অনবদ্য প্রেম। আর গলায় 'এই পথ যদি না শেষ হয়'। মাঝে মধ্যে সুচিত্রার 'তুমিই বলো' বা 'লালালালা'। যা শুনে সে সময় সকলে ভেবেছিলেন এই গলা সুচিত্রার নিজের। কিন্তু নয়। আসলে ওই গলা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। এমন ভাবেই জড়িয়ে গিয়েছিলেন এই দুই শিল্পী। সন্ধ্যার গলা ছাড়া ভাবাই যেত না সুচিত্রা সেনকে।
সপ্তপদী মুক্তির পর বসুশ্রীতে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে এসেছিলেন উত্তম কুমার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সঙ্গে সেদিন 'এই পথ যদি না হয়' গানটি গেয়েছিলেন উত্তম কুমার। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তাঁর সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, "সেদিনের সেই কথা মনে পড়লে, আমার আজও গায়ে কাঁটা দেয়।" সুচিত্রার লিপে যে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কত গান আছে তার ইয়ত্তা নেই। তার মধ্যে মনে দাগ কেটে যায়, 'কে তুমি আমারে ডাকো' (অগ্নিপরীক্ষা), ঘুম ঘুম চাঁদ (সবার উপরে), জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া (সবার উপরে), এই মধু রাত শুধু ফুল পাপিয়ার (সাগরিকা), কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে (পথে হল দেরি), আমার জীবনে নেই আলো (সূর্যতোরণ), নয় নয়, এ তো খেলা নয়(চাওয়া পাওয়া), এই পথ যদি না শেষ হয়(সপ্তপদী), আমি স্বপ্নে তোমায় দেখেছি (বিপাশা), দু' চোখের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে (শ্রাবণ সন্ধ্যা) মতো গানগুলি।
এমন বহু গানে মন জিতেছেন সন্ধ্যা-সুচিত্রা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নিজে বলেছিলেন, "সুচিত্রা সেন যেভাবে গানে লিপ দিতেন, তা দেখে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। শুধু মাত্র চোখ ও মুখের ভঙ্গিতে এমন করে গলা মিলাতে আর কাউকে দেখিনি।" শুধু গানেই নয়। এই জুটির মধ্যে ছিল আত্মার টান।
সুচিত্রা সেনের মৃত্যুদিনে টিভির সামনে পর্যন্ত বসতে পারেননি তিনি। 'গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু' সুচিত্রার লিপে হয়ে উঠেছিল অমর। অথচ এই গানকেই খারাপ বলেছিলেন পরিচালক বিভূতি লাহা। এই গানের সুর করেছিলেন অনুপম ঘটক। ছবির পরিচালকের একেবারেই গান পছন্দ হয়নি। সে কথা সঙ্গীত পরিচালককে জানাতেই কথা কাটাকাটি শুরু দুইয়ে। তবে বাকি সকলের এই গান ভাল লাগে। ছবির রেকর্ডিস্ট ছিলেন যতীন দত্ত। উনিও বললেন, ওঁর ভাল লেগেছে। গানের একটা জায়গায় ছিল “মিতা মোর কাকলী কুহু.......”
ওঁরা ডিরেক্টরকে বললেন, এই জায়গায় সন্ধ্যার গলার কাজটা দেখুন। কী করে বলছেন গানটা কিছু হয়নি? ডিরেক্টর শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন। তারপর আজ এই গান ইতিহাস।
সুচিত্রা ও সন্ধ্যা শুধু সিনেমায় সেরা জুটি নয়। বাস্তবেও তাঁদের দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। সাত পাকে বাঁধা ছবিতে সুচিত্রা সেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন। সে সময় সন্ধ্যা তাঁর বাড়িতে গিয়ে পারফিউম ও চাদর পরিয়ে দেন সুচিত্রাকে। এমনকি সিনেমা ছাড়ার একেবারে শেষ সময়ে সুচিত্রা সেন বেলুড়মঠে যেতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়েই।
তবে সুচিত্রা-সন্ধ্যা জুটি পর্দা এবং বাস্তবের বন্ধুত্বে এক সঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিল, গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু- দিয়েই। আজ আর তাঁরা কেউ নেই। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ায় বার বার উঠে আসবে এই সব স্মৃতি। আজ আলোর পথে হেঁটে যান তাঁরা দু'টিতে ! জুটিতে।
6 months ago | [YT] | 35