Noor Mohammad

আপনার পছন্দ, শুধুই আপনার!
আমেরিকার ট্যারিফ বিতর্ক শুধু একটি সমস্যার লক্ষণ নয়, এটি একটি বৃহত্তর বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়। ট্যারিফের মাধ্যমে আমেরিকা তার শিল্পায়ন পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। কিন্তু এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, এবং এর বিকল্পগুলো কী? এই বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা জানার আগে আসুন আমেরিকার পরিস্থিতি একটু বুঝে নিই।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
�কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সবকিছু বদলে দিচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমেরিকার ৩০-৪০% সেবা খাতের চাকরি—যেমন আইনজীবী, সৃজনশীল পেশা, বিশ্লেষক—হারিয়ে যাবে। এর ফলে যদি আমেরিকায় বেকারত্ব ১৫%-এ পৌঁছে যায় (বর্তমানে এটি ৩.৯%), তাহলে ৫০-৬০% সম্ভাবনা রয়েছে সামাজিক অস্থিরতার। এটি আমেরিকার জন্য একটি বড় সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
তাহলে সমাধান কী?
�আমেরিকার সামনে দুটি পথ রয়েছে: শিল্পায়ন পুনরুজ্জীবন (ফ্যাক্টরি পুনরায় চালু করা) অথবা ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (UBI) চালু করা, যেখানে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে মাসিক একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করা হবে।
পথ ১: শিল্পায়ন পুনরুজ্জীবন
�ফ্যাক্টরি পুনরায় চালু করলে আমেরিকায় ১০-১৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। কিন্তু এর জন্য যা প্রয়োজন:
• আমেরিকার ডলারের মান ৩০-৪০% কমাতে হবে (১৯৮৫ সালের প্লাজা অ্যাকর্ডের মতো), যাতে আমেরিকান পণ্য বিশ্ববাজারে সাশ্রয়ী হয়।
• জীবনযাত্রার মান ২০% কমে যাবে—আইফোনের দাম কমতে পারে, কিন্তু গ্যাস ও ওষুধের দাম বাড়বে।
• আমেরিকার তরুণ প্রজন্মকে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে উৎসাহিত করা, যেখানে ৭৮% তরুণ কাজ-জীবনের ভারসাম্যকে প্রাধান্য দেয়।
পথ ২: ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (UBI)
�ইউবিআই-এর মাধ্যমে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানকে মাসে ১,০০০ ডলারের বেশি দেওয়া হবে, যা বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ও AI-এর মুনাফা থেকে করের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এর সুবিধা ও অসুবিধা:
• ৫০% সম্ভাবনা রয়েছে এটি আমেরিকার আয়ের বৈষম্য কমাতে পারে।
• মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
• এটি বাস্তবায়ন করতে বছরে কমপক্ষে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে, যা আমেরিকার ঘাটতি দ্বিগুণ করবে।
• সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, পুনঃপ্রশিক্ষণ ছাড়া ইউবিআই একটি “ব্যান্ড-এইড” হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা আমেরিকায় একটি হারানো প্রজন্ম তৈরি করবে।
কিছুই না করলে কী হবে?
�কিছুই না করলে আমেরিকায় ১০০% নিশ্চিতভাবে একটি সংকট দেখা দেবে।
বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব কী হবে?
�আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর বড় প্রভাব ফেলবে। আসুন দেখি কীভাবে:
• ট্যারিফ ও শিল্পায়নের প্রভাব: আমেরিকা যদি ট্যারিফ বাড়ায় এবং শিল্পায়নের পথ বেছে নেয়, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, বড় ধাক্কা খেতে পারে। আমেরিকা বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির একটি বড় বাজার। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আমেরিকায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আমেরিকার ট্যারিফ বাড়লে আমাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, ফলে বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।
• ডলারের মান কমলে: আমেরিকা যদি ডলারের মান কমায়, তাহলে বাংলাদেশের টাকার মান তুলনামূলকভাবে বাড়তে পারে। এটি আমাদের রপ্তানিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলবে, কিন্তু আমদানি সস্তা হবে। তবে, আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্সের মূল্য কমে যাবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে, যার একটি বড় অংশ আমেরিকা থেকে আসে।
• ইউবিআই চালু হলে: আমেরিকা যদি ইউবিআই চালু করে, তাহলে আমেরিকানদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়তে পারে, যা বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমেরিকার ঋণ ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।
• কর্মসংস্থানের সুযোগ: আমেরিকায় যদি শিল্পায়ন বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে, আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা ৫আইআর (ফিফথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন) এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
বাংলাদেশীদের জন্য পরামর্শ:
�এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন দক্ষতা শিখুন—বিশেষ করে ডিজিটাল দক্ষতা এবং ৫আইআর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত দক্ষতা। আমাদের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যময় করতে হবে, যাতে আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমে। সরকারকে বিনিয়োগ আকর্ষণে আরও কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে আমরা বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতার মধ্যেও টিকে থাকতে পারি।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটোই নিয়ে আসবে। তাই, চোখ-কান খোলা রাখুন এবং নিজেকে প্রস্তুত করুন। কারণ, যেমনটি বলা হয়েছে—�“আপনার পছন্দ, শুধুই আপনার!” — স্টার ওয়ার্স: এপিসোড III - রিভেঞ্জ অফ দ্য সিথ (২০০৫)
@followers�#এগিয়ে_যাও_বাংলাদেশ #নতুন_সুযোগ #দক্ষতা_অর্জন @বাংলাদেশ_উন্নয়ন

6 months ago | [YT] | 1