Supradip Ghosh

চৌরঙ্গী থেকে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো এলগিন রোডের বাড়িতে। বাড়িতে রাঙা কাকাবাবু তখন সিল্কের ধুতি ও চাদর পড়ছেন। নির্জন বাসের যে ব্রত তিনি গ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা করেছেন সেই ব্রত শুরুর আগে মা ও পরিবারের অন্যান্য সকলের সামনে উনি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষবারের মতো খাবার গ্রহণ করবেন। খাওয়া শেষ হলে মা জননী ও অন্যান্যরা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ওরা ঘুণাক্ষরেও জানলেন না এই বিদায় দীর্ঘ হতে চলেছে। ক্রমশ রাত্রি গভীর হলে বাড়ির সকলে তিন তলায় যে যার ঘরে শুতে গেলেন। ঘরে পর্দার ওপাশে দাঁড়িয়ে রাঙা কাকাবাবু মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের পোশাক পড়েনিলেন। গলাবন্ধ ভাদামি কোর্টের সঙ্গে ঢোলা পায়জামা ও কালো ফেস টুপি। সঙ্গে পড়লেন রোল গোল্ডার ফ্রেমের পুরানো কালো চশমা। দ্বিজেন তখন রাস্তায়। চৌকির সিআইডি দের অপর নজর রাখছে। রাস্তা খালি হওয়া মাত্রই দ্বিজেন এর সংকেত পাওয়া সঙ্গে সঙ্গেই ইলার কাছ থেকে সৎস্নেহ বিদায় নিলেন রাঙা কাকাবাবু । রাঙা কাকা বাবু নিঃশব্দে গাড়িতে উঠলেন। বাইরের গেট অরবিন্দ খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাতের অন্ধকার ভেদ করে দক্ষিণ দিকে ছুটলো ১৯৩৭ মডেলের জার্মান w24 sedan. চৌকির পুলিশ তখন আরামে ঘুমাচ্ছে। লেন্স ডাউন রোড হয়ে উত্তরে ঘুরে গাড়ি পড়লো লোয়ার সার্কুলার রোডে। ফ্লাস্কের কফি খেতে খেতে রাঙা বাবু বললেন " ডি ভালেরার এস্কেপ এর কথা জানো তো? "। বর্ধমান পৌঁছাতে প্রায় চারটে হলো উদ্দেশ্য বারেলি। ১৯৪১ এর ১৭ই জানুয়ারি পরিকল্পনা মাফিক চললো স্টেজ রিহার্সাল। যার মূল আকর্ষণ ছদ্মবেশী ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট ওরফে রাঙা বাবু। রাঙা বাবু সিদ্ধান্ত নিলেন উনি আসানসোল থেকে নয় উনি গোমো থেকে দিল্লি কলকা মেল ধরবেন। পরদিন সন্ধ্যা হতেই গাড়ি গোমোর দিকে রওনা হলো। রাস্তার এক পাশে গাছের নিচে গরুর গাড়ির টুংটাং আওয়াজ তুলে শোভাযাত্রার মতো চলতে লাগলো। সমসাময়িক ইতিহাসের এক বিরাট অ্যাডভেঞ্চারের পটভূমি হিসেবে এই গরুর গলার ঘণ্টার টুংটাং শব্দের মূর্ছনায় এক আশ্চর্য বোধ হচ্ছে। গাড়ি স্টেশন পৌঁছাতে এক ঘুমন্ত কুলি এসে মাল তুলে নিলো। " আমি চললাম তোমরা ফিরে যাও । বাঘ কে কি খাঁচায় বন্ধ করে রাখা যায় হে শিশির ? " এই ছিল তার শেষ শব্ধ। স্বভাব সিদ্ধ দীপ্ত অথচ স্থির ভঙ্গিতে হেঁটে চললেন। দিল্লি কলকা মেল তখন স্টেশনে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর আবার ছেড়েও দিল। ২৭ শে জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার জানতে পরে নেতাজি পলায়ন করেছেন সরকারের নাকের তলা দিয়ে। কিন্তু কি অভিপ্রায়ে তা অজানা। সত্যি তো বাঘকে কেই বা বাড়িতে রাখতে পেরেছে? বুঝে উঠতে পারিনি সারা দেশ। সত্যিই তো কেউ বা বুঝবে তাকে? কেই বা বুঝেছে।
✍️ S. Ghosh.

8 months ago | [YT] | 1