💗RaFiyA💗

ভয়ঙ্কর মায়া🖤🔥


আমি মাহদিয়া চৌধুরী , চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ে আপাতত এটুকুই পরিচয় জেনে নাও

বসে বসে ফোন দেখছি হঠাৎ আমার রুমে আসে আমার চাচাতো ভাই নাম তন্ময় চৌধুরী ফাহাদ
এসে আমাকে বলল পড়তে বসতে, আমিও কোন কথা না বলে পড়তে বসে গেলাম

ভাই আমাকে পড়ায় , পেশায় একজন শিক্ষক আমার থেকে 5 বছরের বড় , পেশা বললে ভুল হবে এটা ওর স্বপ্ন, আমার চাচা মানে ওর আব্বু out of country
ওনার মা আছে আর একটা ছোট বোন আর আমার বড় ভাই আছে আর মা-বাবা সবাই আমরা একসাথে এই বাড়িতে থাকি


যাই হোক ভাইয়ের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, উনার মাথাটা ধরেছে, বেশ অনেকক্ষণ ধরে পড়ছি পড়তে আর ভালো লাগছে না
হঠাৎ বলে উঠলো.....
আমার জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়

আমিও মহা খুশিতে কফি বানাতে গেলাম, এটার অপেক্ষায় ছিলাম আপনার মাথা ধরলে কফি লাগে তাছাড়া মাথাব্যথা কিছুতেই ভালো হয় না , আর বিশেষ করে উনার জন্য কফি বানাতে আমার অনেক ভালো লাগে আজকে পড়তে ভালো লাগছিল না তাই আরো বেশি খুশি হয়ে উনার জন্য কফ বানাতে গেলাম

কফি উনার হাতে দিলাম, 10 মিনিট পর আমাকে বলল "কাপটা রান্নাঘরের রেখে আয়" আমিও কাপটা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলাম

কাপে কিছুটা কফি ছিল একটা চুমুক দিয়ে, সাথে সাথে থু থু দিয়ে ফেলে দিলাম

এত খারাপ কফি আমি কোনদিন খাইনি, মনে হচ্ছে চিনি দেওয়াই হয়নি অথচ কফিটা আমি বানিয়েছি, ভাইয়া কি করে খেলে কফিটা?? ভাবতে ভাবতে ফ্রিজের দরজা খুলে আইসক্রিম হাতে নিলাম।

প্রায় 30 মিনিট ধরে টিভি দেখছি আর আইসক্রিম খাচ্ছি, হঠাৎ আমার বড় ভাই আরাফাত চৌধুরী মিরাজ এসে বললো....
কিরে শয়তান এখনো আইসক্রিম খাচ্ছিস, তন্ময় তোর জন্য অপেক্ষা করছে, আজকের তোর কপালে শনি আছে

কথাটা শুনে কোন দিকে না তাকিয়ে, নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলাম, ভাইয়া এখনো বসে আছে, আমি যেতেই আমার দিকে আগুনের মত লাল চোখ নিয়ে
আমার দিকে তাকালো , এই বুঝি কখন একটা থাপ্পর দিবে সেটাই ভয় পাচ্ছি আমি

তোতলিয়ে তোতলিয়ে বললাম.....
"ভা-ইই-য়া স-সরি"
ভাইয়া কিছু বললো না আমার কাছে এসে আমার হাতটা ধরে নিচে নিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে নিয়ে গিলো, আম্মু আর চাচিকে বলল....
"আজকে সবার ছুটি আজকে রাতের রান্না করবে চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ে"
সবাই অবাক , যে মেয়ে কফি ছাড়া আজ পর্যন্ত কিছুই বানাইনি সে নাকি রান্না করবে
চাচি বললো...
পাগল হয়ে গেছিস তুই ও রান্না করতে পারবে না
ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল....
"কিরে পারবি না?? বল সবাইকে"
আমি তোতলিয়ে বললাম....
"না"
চেঁচিয়ে বলে উঠলো....
"কিহ্??"
কলিজাটা কেঁপে উঠলো কখন আবার থাপ্পর মেরে বসে তাই বাধ্য হয়ে বললাম....
"না সবাই বাইরে যাও আজকে আমি রান্না করবো"

দুইটা সার্ভেন্ট আম্মু, চাচি সবাই বেরিয়ে গেল
ইউটিউব থেকে সব রান্না করলাম ধরতে গেলে এটাই আমার প্রথম রান্না

~~~~

দীর্ঘ 3 ঘন্টা পরিশ্রম করে রান্না করে, রাতে সবাইকে খাইয়েছি, ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় ১০টা হঠাৎ ভাইয়া এসে বললো "পড়তে বসতে" , ভাল্লোগেনা যখনই আসবে তখনই শুধু পড়া পড়া আর কোন কথা নেই কথাটা বিড় বিড় করেই বললাম জোরে বলার সাহস নেই আমার

বেশ কয়েক মিনিট পর ভাই আমার রুমের বারান্দায় গেলো, এই সুযোগে আমার ভাইয়ের ফোনটা হাতে নিলাম একটা মেসেজ দেখলাম "তন্ময় কেমন আছে আমার....??" আর কিছু দেখার আগেই ভাইয়া রুমে এসে আমার হাত থেকে ফোনটা আচমকা নিয়ে নিলো

আর বিরক্তি নিয়ে বললো....
এরপর থেকে কখন আমার ফোন ধরবি না

বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, বুঝতে পারলাম আজকে আর পড়াবে না ভাইয়া তাই সব বই গুছিয়ে বিছানায় শরীর এড়িয়ে দিলাম ভাবতে লাগলাম..

আজকে সারাদিনের কথাগুলো ভাবতে থাকলাম, আজকে আমার রান্না খেয়ে সবাই প্রশংসা করেছে শুধু তন্ময় ভাইয়া ছাড়া, খাওয়ার সময় অনেক শুধু নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে মৃত হেসেছেন এখন ভাই আমার সাথে এমন কেন করে?? বিশেষ করে আমার 16 তম জন্মদিনের পর থেকে, আগে তার ফোন ধরলে আমাকে কিছু বলতো না, এখন তার ফোনের দিকে তাকাতে পর্যন্ত দেয় না, কি এমন রহস্য আছে ঐ ফোনে???

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম, ফোনে অনেকবার কল এসেছে কেটে দিয়েছি এবার আর সহ্য করতে না পেরে ফোনটা ধরলাম, তন্ময় ভাইয়ার ফোন

ভাইয়া বললো...
"কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি, এত ঘুম কিসের???"
স্বাভাবিকভাবে বললাম...
"ভেবেছিলাম অন্য কোন ছেলে ফোন দিয়েছে তাই ধরিনি "
কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো.....
"কেন অন্য ছেলেরা কি তোকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করে নাকি??"
স্বাভাবিকভাবে বললাম....
"না"
গভীর কন্ঠে বললো...
"তাহলে??? যাই হোক বাদ দে আমার খুব মাথা ব্যথা করছে, এক কাপ কফি নিয়ে আমার রুমে আয়"

কিছু বলার আগে ফোনটা কেটে দিল, তাড়াতাড়ি করে ওঠে কোন রকমের ফ্রেশ হয়ে, ভাইয়ার রুমে গেলাম, তুমি কেউ নেই তাই অনুমতি না নিয়ে এই রুমে ঢুকলাম, দেখলাম ভাইয়া কার সাথে যেন কথা বলছে
ওপাশ থেকে কি বলেছে শুনতে পাইনি কিন্তু বলছে..
"চিন্তা করিস না , তোর মহারানীকে আমি খুব শাসনে আগলে রেখেছি "
এটুকু বলে ভাইয়া পিছনে ঘুরে তাকায় , আমাকে রেখে তাড়াতাড়ি করে ফোনটা কেটে দেয়

বারান্দায় থাকা সোফায় শুয়ে পড়ে আর বলে....
"কারো অনুমতি ছাড়া তার রুমে ঢুকতে হয় না জানিস না??? লুকিয়ে লুকিয়ে কারো কথা শুনতে হয় না, এতটুকু পারিবারিক শিক্ষা কি নেই???"

কিছু বললাম না, কিছুক্ষণ পর আবার বলল....
"কফিটা এখানে রাখ আর আমার মাথাটা টিপে ব্যথাটা অনেক বেড়েছে এই ব্যথার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারিনি"

কিছু না বলে মাথা টিপতে শুরু করলাম, বারান্দায় হালকা বাতাস বইছে ফেব্রুয়ারি তো এমনটাই হওয়ার কথা, ভাইয়ার চোখ বন্ধ , আমি আলতো ভাবে মাথা টিপে দিচ্ছি হঠাৎ একটা মেসেজ এসো ভাবলাম ভাইয়া ঘুমিয়ে গেছে তাই ফোনের দিকে হাত বাড়ালাম, আমি ফোনটা ধরার আগে ভাইয়া ফোনটা নিয়ে নেয়
ফোনটা হাতে নিয়ে বলল .....
"তুই রুমে চলে যা আর হ্যাঁ কখনো যেন আমার অনুপস্থিতিতে আমার ফোন ধরতে না দেখি দেখলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না"


অভিমান করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম, আর মাত্র 5 দিন পর আমার জন্মদিন তবে এখন আর আমার জন্মদিনটা পালন করা হয় না আগে ভাইয়া নিজ থেকেই আমাকে সারপ্রাইজ দিতো কিন্তু এখন ভাইয়াই বলে জন্মদিনে আমি যেন বাসায় কাউকে দাওয়াত না দিই
আমি মনে ভাবলাম ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে তাই এত শাসনে রাখে , আমিও ভাইয়াকে প্রচন্ড না না আজ থেকে নয় আরো 5 বছর আগে থেকেই


~~`

আজ 25 ফেব্রুয়ারি আমার জন্মদিন, ভাইয়া না বলেছে তাই কাউকে দাওয়াত দেওয়ার সাহস আমার নেই, সকাল 8:00 টার সময় ভাইয়া আমার রুমে এসে বলল.....
"রেডি হতো কে নিয়ে কোথাও একটা যাব"

আমি খুব খুশি হলাম ভাবলাম হয়তো আজকে আমার জন্মদিন তাই আমাকে সারপ্রাইজ দিবে, শুধু রেডি হতে বললে চাইনি সাথে একটা লাল শাড়িও দিয়ে গেছে, আমার 16 তম জন্মদিনের পর থেকে ভাইয়া আমাকে কখনো লাল পোশাক পরতে দেয়নি অথচ আজ নিজেই একটা লাল শাড়ি দিয়ে গেছে আমি তো মহা খুশি

লাল শাড়ি পড়ে, মাথায় খোঁপা করে সাদা কয়েকটা ফোন লাগালাম, ঠোটে হালকা লিপস্টিক

~~~~


ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি বসে বসে বাইরের দৃশ্য দেখছি, গাড়ি একটা এয়ারপোর্টে এসে থামলো

ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই বললো....
"নাম গাড়ি থেকে"
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম....
"ভাইয়া এখানে "
গভীর কন্ঠে
"হ্যাঁ কেন কোন সমস্যা???"

মাথা নেড়ে না বললাম

আবার বলল ....
"তাহলে নাম"


~~~~


বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাইয়া ফুল নিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে, কে সে জানা নেই আমার, শুধু নিরবে ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছি

হঠাৎ একটা ছেলেকে দেখে ভাইয়া তার দিকে এগিয়ে গেল, আমিও গেলাম ছেলেটা কে বেশ চেনা চেনা লাগছে, হঠাৎ মনে পড়ল হ্যাঁ এটা রাহুল আহমেদ শুভ্র ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড আমার 16 তম জন্মদিনের কিছুদিন পরে বাবার ব্যবসা সামলাতে আমেরিকা গিয়েছিল

ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে , ভাইয়া রাহুল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষণ পর রাহুল ভাই আমার দিকে ইশারা করে বলল....
"এটাই তো ও তাই না???"
ভাই আমি মুচকি হেসে বলল....
"হ্যাঁ এত বছরের আগের রাখা ভালোবাসা"

ভাইয়া রাহুল ভাইয়াকে আমার কাছে নিয়ে আসলো , আমার হাতটা রাহুল ভাইয়ের হাতে রেখে বলল.....
"আজ থেকে আমার দায়িত্ব শেষ , তোর ভালোবাসাকে তোর হাতে তুলে দিলাম, এখন আমি মুক্ত"

কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম ভাই আমাকে ভালোবাসে না, রাহুল ভাইয়ার কথা এতদিন আমাকে শাসনে রেখেছে, আজ সময় হয়েছে তাই রাহুল ভাইয়ের হাতে তুলে দিচ্ছে

কিছু না ভেবেই ভাইয়ার গালে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম, ভাইয়া কিছু বললো না , শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, কি বা বলবে সে ??? আশেপাশে না তাকিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম, আমার কাছে টাকা ছিল সে টাকা দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম





এটা প্রথম পাঠ, আর একটা পাঠ আছে তোমরা ছোট গল্প পড়তে পছন্দ করো যারা আমার পুরাতন সাবস্ক্রাইবার আছো তারা জানো আমি আগেও অনেকবার ছোট গল্প দিয়েছি ☺️ছোটগল্প অনেকদিন দেওয়া হয় না তাই এটা দিলাম আশাকরি ভালো লাগবে👀💗☺️ রাগ অভিমান নাকি ভালোবাসা এর পার্ট 3 আইডিতে দিয়েছি দেখে আসো💯💗 আর এই গল্পের দ্বিতীয় পাট কি দেবো????😌🔥

Skip the Carousel

1 2

1 month ago (edited) | [YT] | 7