Fairy Of Novel

#রক্ত_আর_রোদ্দুর
#মারজিয়া_আক্তার#পর্ব_১


প্যারিসের শরতের বিকেল। আকাশে হালকা মেঘ, রোদ্দুরটা মলিন আর নরম হয়ে নেমে এসেছে। রাস্তার দু’পাশে সোনালি পাতার আস্তরণ পড়ে আছে, বাতাসে মিশে আছে কফির গন্ধ। বিদেশি শহরের কোলাহল, অচেনা মানুষ, অচেনা ভাষা—সব মিলিয়ে তৈফিনের বুকের ভেতর একধরনের টানাপোড়েন কাজ করছিল।

সে নতুন এসেছে ফ্রান্সে, পড়াশোনার জন্য। ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল, তখন মনে হলো বিশাল এক সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। যেদিকে তাকায়, নতুন নতুন মুখ, কেউ ফরাসি, কেউ আফ্রিকান, কেউ এশিয়ান। হঠাৎ মনে হলো, এত ভিড়ের মাঝেও সে ভীষণ একা।

হেঁটে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই কানে এলো চিৎকার আর হাসাহাসির শব্দ। ক্যাম্পাসের এক কোণায় সবুজ ঘাসের মাঠ। সেখানে কয়েকজন ছেলে মিলে ফুটবল খেলছে। আর তাদের মাঝখানে এক মেয়ে—ছোট চুল, লেদার জ্যাকেট, হাতে বাইকের হেলমেট। ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়াচ্ছে, বল কন্ট্রোল করছে, যেন খেলাটাই তার প্রাণ।

তৈফিন থেমে গেল। তার চোখ আটকে রইল মেয়েটির দিকে।
*“কে এই মেয়ে?”*

হঠাৎ বলটা গড়িয়ে এসে পড়ল তার পায়ের কাছে। সে নিচু হয়ে বলটা তুলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই মেয়েটি দ্রুত এগিয়ে এলো।

“Hey, are you new here?”—ইংরেজিতে প্রশ্ন করল মেয়েটি। কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস, চোখে দুষ্টু ঝিলিক।

তৈফিন এক মুহূর্ত থমকাল।
“হ্যাঁ… মানে, yes, I’m new. আজই প্রথম day।”

মেয়েটি হেসে উঠল। বলটা হাতে তুলে নিল।
“Good. Welcome to France.”

তারপর হঠাৎ বাংলায় বলে উঠল,
“তুমি তো বাংলাদেশি, তাই না?”

তৈফিন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
“তুমি… বাংলা বলতে পারো?”

মেয়েটি কাঁধ ঝাঁকালো।
“Of course. আমি জেসিকা। এখানে জন্মেছি, কিন্তু বাসায় এখনো Bangla চলে। Problem?”

তৈফিন মাথা নাড়ল।
“No problem.”

জেসিকার ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। সে হাত বাড়িয়ে দিল।
“Then… let’s be friends?”

তৈফিনের মনে হলো, এই বিদেশি শহরে, অচেনা জনসমুদ্রে, হয়তো সে হঠাৎই একটা পরিচিত আত্মার দেখা পেল।

হাত মেলানোর মুহূর্তে সে জানত না—এই মেয়েটি তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বদলে দেবে, নিয়ে যাবে এক রক্ত আর রোদ্দুরে ভরা যাত্রায়।

চলবে......

1 month ago | [YT] | 9